চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মীরসরাই উপজেলা শাখার আয়োজনে সফল একটি পদযাত্রা (ওয়াকাথন) ৩৪ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বুধবার (২২ মার্চ) সম্পন্ন করলেন সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মাহবুব-উর রহমান রুহেল। মীরসরাইয়ের শুরু বড়দারোগারহাট থেকে সকাল ৫টা ১০ মিনিটে শুরু করা এই পদযাত্রা সোয়া ১১টার দিকে শেষ হয় শুভপুর সেতুতে। আয়োজক সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এই দেশের তরুন সমাজ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই দিন একজন সংসদ সদস্য হয়েও দেশ মাতৃকার সম্মান ও অধিকার রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনের পর শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর দোষররা এই দেশের মুক্তিকামী জনগনকে জিম্মি করে হত্যা করছে। নিরস্ত্র বাঙালীদের প্রতিবাদের ভাষা রুখে দিতে চায় তারা। এমনি এক যুদ্ধের সময় টার্গেট করে মেধাবীদের হত্যা করে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠী। ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে অপারেশন সার্চ লাইট নামের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে নামে পাক হানাদারবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধকালীন সাব সেক্টর কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তার সঙ্গীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে পরিকল্পনা করে,
চট্টগ্রামবাসীকে রক্ষা করতে হলে ‘শুভপুর ব্রিজ’ আলাদা করতে হবে যাতে যান চলাচল করতে না পারে। সময় খুব কম, একদিকে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে অপরদিকে সাহসীকতার সহিত অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ব্রিজটি ধ্বংস করে সশস্ত্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাঁজোয়া যানের গতিরোধ করে চট্টগ্রামবাসীকে বড় হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস থেকে রক্ষা করে। এই গৌরবময়, ইতিহাসের স্বাক্ষী ‘শুভপুর সেতু’র স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিতে এই ‘পদযাত্রা বা ওয়াকাথন’ এর আয়োজন করে আমুস সংগঠনটি। পদযাত্রা শেষ করে শুভপুূর সেতুতে পৌঁছালে সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সন্তানরা ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায়। পরে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানান। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি নয়ন কান্তি ধুম বক্তব্যে বলেন, এই অঙ্গীকারে আমাদের প্রিয় নেতা মাহবুব রহমান যেমন ৩৪ কিলোমিটার হাঁটার দূ:সাহসিক অভিযান সম্পন্ন করেছেন, তেমনি একটি ‘দাতব্য তহবিল’ গঠনের ঘোষনাও দিয়েছেন। এই তহবিল স্বাধীনতার এই মাস থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানে ব্যায় করা হবে। তিনি বলেন, একটি সুন্দর মীরসরাই বিনির্মানে যিনি নিরলস চমকপ্রদ কাজ করে যাচ্ছেন আসুন তার সাথে অঙ্গীকার করি, সমৃদ্ধির মীরসরাই গড়তে সকলে এক হয়ে সহায়তা করি।
উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমেদ বলেন, মীরসরাইয়ের কৃতি সন্তান সাহসী তরুন মাহবুব রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এমন দূ:সাহসিক পদযাত্রা তার পিতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কৃতিত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়। পদযাত্রা সম্পন্ন করার পর, মাহবুব রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে আজকে বড় দারোগাহাট থেকে শুভপুর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পথ সম্পন্ন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার ধারণার চেয়েও বেশি কঠিন ছিল এই পদযাত্রা। ২০ কিলোমিটার অতিক্রম এর পর থেকে গোড়ালিতে ব্যথা শুরু হয়। দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি এবং মানুষের দোয়ায় এই পদযাত্রা সমাপ্ত করা সম্ভবপর হয়েছে। যারা বিভিন্নস্থানে আমাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং আমার সাথে হেঁটেছে এবং বিশেষ করে যারা তহবিল প্রদান করেছে তাদের অগাধ শ্রদ্ধার সাথে ধন্যবাদ জানাই। অনুষ্ঠানটির সহযোগিতায় ছিল ১ নং করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দীন জসিম। যৌথ সঞ্চালনা করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামরুল হাসান কামরুল এবং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ সেলিন। বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, প্রমূখ।