হাটহাজারীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর দেয়া আদেশ কে তোয়াক্কা না করে ‘বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন’ কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আবারও সেই কৃষি জমি ভরাট সংশ্লিষ্ট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অর্থদন্ডে দন্ডিত ফখরুল ইসলাম প্রকাশ ফখর। এতে স্থানীয়দের মধ্যে একটি প্রশ্নই ঘোরপাক খাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দন্ডিত ফকরুল ইসলামের খুঁটির জোর কোথায় !
শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) উপজেলার ৮নং মেখল ইউনিয়নের জান আলী চৌধুরী বাড়ীর সামনে উত্তর মেখল এলাকার সেই ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশ দেয়ার ২ মাস পার হয়ে গেলেও সেই ভরাটকৃত জমির বালি না সরিয়ে উল্টো সেই জমির চারপাশে ইট,বালি,লোহা ও সিমেন্ট দিয়ে সীমানা প্রাচীর তৈরীর কাজ করে যাচ্ছেন এবং পাশে আরো একটি অংশে ভরাট করা শুরু করেছে।
জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর শনিবার সকালের দিকে উল্লেখিত স্থানের চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহা-সড়কের ইছাপুর বাজারের পশ্চিমে রাস্তার উত্তর পাশের বিশাল আয়তনের কৃষি জমি বালি দিয়ে ভরাট করার সময় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মশিউজ্জামান এর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থলে পাওয়া ভরাট কাজে জড়িত উপজেলার উত্তর মেখল এলাকার সামাদ আলী তালুকদার বাড়ির মনির আহমদের পুত্র ফখরুল ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন এ ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এবং ভরাটকৃত বালি ওই জমি থেকে অপসারন করে জমিটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এসময় উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো আবু রায়হানও উপস্থিত ছিলেন। তখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “কৃষি জমি সুরক্ষা ও নিরাপদ মহাসড়ক নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা রয়েছে। সে মোতাবেক হাটহাজারীতে বিভিন্ন সময় মাইকিং করা হয়েছে ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ওই অভিযানটিও তার অংশ এবং কৃষি জমি সুরক্ষা ও মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে শুক্রবার বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্দেশ দেয়ার ১ মাস ১৯ দিনের মাথায় সেই দন্ডিত ফখরুল ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে পুনরায় সেই জমিতে ইট, বালি,লোহা,সিমেন্ট ব্যবহার করে আরসিসি পিলার তৈরী ও ভরাট কাজ শুরু করে। সেই কাজের নির্মাণ সামগ্রী হাটহাজারী-রাউজান আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর রাখার কারনে গত ৯ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় ওই এলাকার গিয়াস চেয়ারম্যান বাড়ির অসহায় এক মহিলার একমাত্র সন্তান সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতও হয়। ঘটনার পর পর ওই কৃষি জমিতে প্রাচীর নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা পালিয়ে গেলেও নিহতকে দাফন করার পরদিন সকাল থেকে আবারও পুনরায় কাজ শুরু করে তারা। এতে স্থানীয়দের মুখে একটি প্রশ্নই ঘোরপাক খাচ্ছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর আদেশ না মেনে কিভাবে সেই দন্ডিত ফকরুল পুনরায় কৃষি জমিটিতে নিয়ম বর্হিভূতভাবে কাজ করে যাচ্ছে! আসলে তার খুঁটির জোর কোথায় !
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তিরা প্রতিবেদক কে জানান, তারা নাকি প্রশাসন, স্থানীয় ভালো পত্রিকা, প্রায় সাংবাদিক থেকে শুরু করে সব মহল ম্যানেজ করে কাজ করছে তাই কেউ তাদের কিছুই করতে পারবে না।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশ কে তোয়াক্কা না করে পুনরায় সেই কৃষি জমিতে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে দন্ডিত সেই ফকরুল ইসলাম শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, কাজটির সাথে আমি জড়িত না, কারা করছে তাও জানি না।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরীর বাসার সামনে এমন নিয়মবহির্ভূত উপায়ে কৃষি জমি ভরাট ও প্রাচীর নির্মাণ কাজ চলছে এ ব্যাপারে আপনার করনীয় কিছু আছে কিনা, বা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ শুরুর দিকে আমি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। তখন অভিযান করে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিলো এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভরাটকৃত বালি সরিয়ে ওই কৃষি জমিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আদেশ দিয়েছিলেন ভ্রাম্যমান আদালত। এর পর আমি ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে এসে দেখি সে দন্ডিত ব্যক্তি আদেশতো পালন করেননি উল্টো সেই কাজও চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা কৃষি অফিসার মো.আল মামুন সিকদারের দৃস্টি আকর্ষণ করা হলে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, এভাবে কৃষি জমি হারিয়ে গেলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাদের সকলকে। ইউএনও মহোদয়কে ছবিসহ আমি বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি এ ব্যাপারে একটি মামলা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। আর এ ব্যাপারে দ্রুত এ্যাকশনে যেতে পারবেন ইউএনও স্যার এবং এসি ল্যান্ড মহোদয়, কারন তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ভ্রাম্যমান আদালতে নির্দেশ দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, এ ব্যাপারে কৃষি আইনে একটি মামলা করা হবে। আর সড়কে নির্মাণ সামগ্রী রাখলে তা জব্দ করা হবে। আমি খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।