চট্টগ্রাম 7:13 pm, Wednesday, 9 October 2024

মসজিদে নামাজ বন্ধের অভিযোগ, ব্যবহার হচ্ছে ধান রাখার জায়গা হিসেবে

রাঙ্গুনিয়ায় মসজিদের নামাজ বন্ধ রেখে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে সৈয়দ আহমদ নামক এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে। মসজিদটিতে রাখা হচ্ছে ধান ও গাছ। এমনকি মসজিদের নামের একটি মিটারও ব্যবহার করছে পার্শ্ববর্তী একটি পরিবার। মসজিদ জুড়ে অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে ধুলোর আস্তরণ পড়েছে পবিত্র কুরআন শরীফে। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মসজিদটি উন্মুক্তের দাবীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদেরকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর মুমেনাবাদ এলাকার জনৈক সৈয়দ আহমদের তত্ত্বাবধানে মমধ্যপ্রাচ্যের সারজার একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুদানে ২০১১ সালে মসজিদে হযরত উম্মে ছালমা (রা:) নামে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের কিছুদিন পর থেকেই এটি বন্ধ করে তালাবদ্ধ করে রেখে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতে একদিকে যেমন মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে মসজিদ থাকার পরও মসজিদে নামাজ আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ।

বুধবার (৩ মে) লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মসজিদ পরিদর্শনে যান উপজেলা ইসলামী ফাউন্ডেশন ফিন্ড সুপারভাইজার মো. আবু তাহের, ও এমসি মৌওলানা কাজী জহিরুল ইসলাম। তাঁরা জানান, মসজিদের বিভিন্ন তথ্য নেওয়া হয়েছে। তবে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ আহমদের মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। ইউএনও বরাবর রিপোর্ট প্রদান করা হবে। এসময় দেখা যায়, মসজিদের ভেতর ছড়িয়ে থাকা ধান ও ছাগলের মলমূত্রে ভরা। মসজিদের এক কোণে রাখা দুটি কুরআনের উপর ময়লায় স্তুপ জমেছে। পাশে বস্তা করে রাখা হয়েছে ধান। মানুষের পদচারণ না থাকায় বাইরে থেকে লম্বা হওয়া ঘাস ভিতরে প্রবেশ করেছে। মসজিদের টয়লেটও পরিত্যক্ত হয়ে আছে। মসজিদের বিদ্যুৎ এর মিটারটিও ব্যবহার করছেন পাশ্ববর্তী একটি পরিবার। মসজিদের মাঠে সবজি চাষ করা হয়েছে। এক প্রকার পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে মসজিদটি।

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান(৬৫) জানান, দীর্ঘদিন যাবত মসজিদ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মসজিদটি পরিচালনায় কমিটি দিতে বললেও তাও দেওয়া হয়না। এলাকার স্বার্থে অতিদ্রুত মসজিদ কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।

আবদুল খালেদ (৭০) নামে একজন বলেন, মসজিদটি বন্ধ থাকায় বিকল্প মসজিদ হিসেবে আমাদের দুটো পাহাড় টপকে অন্য মসজিদে যেতে হয়। ৫০ থেকে ৬০ পরিবার আমরা কষ্টে আছি।

আমেনা বেগম নামে এক মহিলা জানান, আজানই শুনি না। মাঝেমধ্যে মনে হয় হিন্দু পাড়াই বসবাস করছি। মসজিদ চালু হলে আমাদের শিশুরা মক্তবে আরবী পড়তে পারবে, নামাজ পড়তে পারবে।

তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ আহমদের সাথে দেখা না হলেও তার ভাইয়ের ছেলের বউ সাইরা বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, কি কারণে মসজিদ বন্ধ রাখা হয়েছে জানিনা। তবে আমার ছেলেরা মসজিদে আজান দেয়। নামাজ পড়ে। তিনি মসজিদটি পরিপূর্ণভাবে চালু করার আহবান জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, নামাজ আাদায়ের জন্য মসজিদ উম্মুক্তের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়ে ইসলামী ফাউন্ডেশনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে প্রয়োজনীয়  ব্যবর্স্থা করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

রাঙ্গুনিয়ায় ১৬২টি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন সেনাবাহিনীর, নাশকতার চেষ্টা কঠোর হাতে দমনের ঘোষণা

মসজিদে নামাজ বন্ধের অভিযোগ, ব্যবহার হচ্ছে ধান রাখার জায়গা হিসেবে

Update Time : 07:07:54 pm, Wednesday, 3 May 2023

রাঙ্গুনিয়ায় মসজিদের নামাজ বন্ধ রেখে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে সৈয়দ আহমদ নামক এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে। মসজিদটিতে রাখা হচ্ছে ধান ও গাছ। এমনকি মসজিদের নামের একটি মিটারও ব্যবহার করছে পার্শ্ববর্তী একটি পরিবার। মসজিদ জুড়ে অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে ধুলোর আস্তরণ পড়েছে পবিত্র কুরআন শরীফে। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মসজিদটি উন্মুক্তের দাবীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদেরকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর মুমেনাবাদ এলাকার জনৈক সৈয়দ আহমদের তত্ত্বাবধানে মমধ্যপ্রাচ্যের সারজার একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুদানে ২০১১ সালে মসজিদে হযরত উম্মে ছালমা (রা:) নামে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের কিছুদিন পর থেকেই এটি বন্ধ করে তালাবদ্ধ করে রেখে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতে একদিকে যেমন মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে মসজিদ থাকার পরও মসজিদে নামাজ আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ।

বুধবার (৩ মে) লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মসজিদ পরিদর্শনে যান উপজেলা ইসলামী ফাউন্ডেশন ফিন্ড সুপারভাইজার মো. আবু তাহের, ও এমসি মৌওলানা কাজী জহিরুল ইসলাম। তাঁরা জানান, মসজিদের বিভিন্ন তথ্য নেওয়া হয়েছে। তবে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ আহমদের মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। ইউএনও বরাবর রিপোর্ট প্রদান করা হবে। এসময় দেখা যায়, মসজিদের ভেতর ছড়িয়ে থাকা ধান ও ছাগলের মলমূত্রে ভরা। মসজিদের এক কোণে রাখা দুটি কুরআনের উপর ময়লায় স্তুপ জমেছে। পাশে বস্তা করে রাখা হয়েছে ধান। মানুষের পদচারণ না থাকায় বাইরে থেকে লম্বা হওয়া ঘাস ভিতরে প্রবেশ করেছে। মসজিদের টয়লেটও পরিত্যক্ত হয়ে আছে। মসজিদের বিদ্যুৎ এর মিটারটিও ব্যবহার করছেন পাশ্ববর্তী একটি পরিবার। মসজিদের মাঠে সবজি চাষ করা হয়েছে। এক প্রকার পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে মসজিদটি।

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান(৬৫) জানান, দীর্ঘদিন যাবত মসজিদ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মসজিদটি পরিচালনায় কমিটি দিতে বললেও তাও দেওয়া হয়না। এলাকার স্বার্থে অতিদ্রুত মসজিদ কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।

আবদুল খালেদ (৭০) নামে একজন বলেন, মসজিদটি বন্ধ থাকায় বিকল্প মসজিদ হিসেবে আমাদের দুটো পাহাড় টপকে অন্য মসজিদে যেতে হয়। ৫০ থেকে ৬০ পরিবার আমরা কষ্টে আছি।

আমেনা বেগম নামে এক মহিলা জানান, আজানই শুনি না। মাঝেমধ্যে মনে হয় হিন্দু পাড়াই বসবাস করছি। মসজিদ চালু হলে আমাদের শিশুরা মক্তবে আরবী পড়তে পারবে, নামাজ পড়তে পারবে।

তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ আহমদের সাথে দেখা না হলেও তার ভাইয়ের ছেলের বউ সাইরা বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, কি কারণে মসজিদ বন্ধ রাখা হয়েছে জানিনা। তবে আমার ছেলেরা মসজিদে আজান দেয়। নামাজ পড়ে। তিনি মসজিদটি পরিপূর্ণভাবে চালু করার আহবান জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, নামাজ আাদায়ের জন্য মসজিদ উম্মুক্তের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়ে ইসলামী ফাউন্ডেশনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে প্রয়োজনীয়  ব্যবর্স্থা করা হবে।