চট্টগ্রাম 1:39 am, Saturday, 21 September 2024

মহাকবি কায়কোবাদ’র ৭২ তম মৃত্যু বার্ষিকী

‘মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি পরিষদ’ এর উদ্যোগে নোয়াদ্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কবির ৭২তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি পরিষদ’ এর সভাপতি ও মহাকবি কায়কোবাদের দৌহিত্র নাজিম আল কোরাইশী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আরশাদ আলীসহ সমাজকর্মী মো. সালাহউদ্দিন, মো. কফিল উদ্দিন, রুমা সুলতানা, মো. উজ্জল প্রমুখ।

‘কায়কোবাদ’ কবির সাহিত্যিক নাম হলেও তার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ কাযেম আল কোরেশী। সেই সময়ে পোস্ট মাস্টারের চাকরি করে কবিতা লিখে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে কবি কায়কোবাদ খ্যাতিমান কবি হিসেবে দেশে-বিদেশে সমভাবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৮৭০ সালে কায়কোবাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিরহ বিলাপ’ প্রকাশ হলে বাংলা সাহিত্যঙ্গণে আলোড়ন সৃষ্টি শুরু হয়। কায়কোবাদ মূলত একজন গীতিকবি। এছাড়া সনেট, মহাকাব্য, কাহিনীকাব্য ও গানেও ছিলেন সমানভাবে পারদর্শী, তৎকালীন সময়ে কবিমহলে ব্যাপক প্রসংশিত হয়ে ছিলেন মহাকবি কায়কোবাদ। মুসলমান কবিদের মধ্যে তিনিই প্রথম মহাকবি উপাধি লাভ করেন।

কবি তাঁর ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার অবহেলিত তার প্রমান হচ্ছে আগলা গ্রামে কবির তেমন কোন স্মৃতি চিহ্ন খোজে পাওয়া যায় না, আর যে স্মৃতিগুলো আছে সেগুলোও নিচিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কবির মৃত্যুর পর তার পৈতৃক বাড়ির একটি অংশ বিক্রি করলেও বাদবাকি অংশ বেদখল হয়ে আছে। কবির ভক্ত অনুরাগীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগলা গ্রামে এসে কোন স্মৃতিচিহ্ন না দেখে বিস্মিত হন।

২০০৬ সালে কবির বাড়ির সামনের রাস্তাটি কবির নামে একটি ফলক নির্মাণ করা হয়। ফলকটি এখন আর নেই, কে বা কারা ভেঙে ফেলেছে। ফলে রাস্তাটি যে কায়কোবাদের নামে করা তাও মুছে যাচ্ছে।

১৯৭২ সালে প্রাক্তন গণপরিষদ সদস্য আবু মো. সুবিদ আলী টিপু কবির সম্মনার্থে আগলা গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন কায়কোবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের পাঠাগারে কায়কোবাদের কোন বই নেই। যার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কবির সর্ম্পকে জানতে পারছে না।

কবির গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মহাকবির গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছে বলে নিজে থেকে গর্ববোধ মনে করি। কিন্তু কবি সর্ম্পকে আমরা তেমন কিছুই জানতে পারছি না। আর সেটা আমাদের লজ্জার ব্যাপার! কবির স্মৃতিকে সংরক্ষণ করতে হলে নবাবগঞ্জে একটি একাডেমি ও গণগ্রন্থাগার চালু করা দরকার।

কবির বাড়ির পশ্চিমে ১৯৮৩ সালে আগলা মাঝপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত করা হয় কায়কোবাদ যুব ক্লাব ও গণপাঠাগার। জায়গাটি বরাদ্দ দেন স্থানীয় জনৈক হরিষচন্দ্র পোদ্দার। গত ১০ বছর ধরে পাঠাগারটির সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে এলাকায় মাদকসেবীদের আড্ডাস্থানে পরিণত হয়েছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার চৌরাস্তায় কায়কোবাদের নামে গোল চত্বর নির্মাণ করা হলেও সেটি ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে স্বাধীনতা চত্বর। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে চত্বরটি পুনস্থাপনের দাবি জানিয়ে আসলেও দীর্ঘ ১০ বছরেও তা বসানোর কোন উদ্যোগ কেউ নেননি।

মহাকবির আত্মীয়দের দাবী, কবির বাড়িটি দখলমুক্ত করে করির নামে একটি পাঠাগার ও গবেষণাগার নির্মাণ হলে কবির সর্ম্পকে অজানা তথ্য জানা যাবে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মীরসরাই প্রফেশনাল সোসাইটির উদ্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ প্রদান

মহাকবি কায়কোবাদ’র ৭২ তম মৃত্যু বার্ষিকী

Update Time : 10:39:55 pm, Sunday, 23 July 2023

‘মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি পরিষদ’ এর উদ্যোগে নোয়াদ্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কবির ৭২তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি পরিষদ’ এর সভাপতি ও মহাকবি কায়কোবাদের দৌহিত্র নাজিম আল কোরাইশী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আরশাদ আলীসহ সমাজকর্মী মো. সালাহউদ্দিন, মো. কফিল উদ্দিন, রুমা সুলতানা, মো. উজ্জল প্রমুখ।

‘কায়কোবাদ’ কবির সাহিত্যিক নাম হলেও তার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ কাযেম আল কোরেশী। সেই সময়ে পোস্ট মাস্টারের চাকরি করে কবিতা লিখে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে কবি কায়কোবাদ খ্যাতিমান কবি হিসেবে দেশে-বিদেশে সমভাবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৮৭০ সালে কায়কোবাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিরহ বিলাপ’ প্রকাশ হলে বাংলা সাহিত্যঙ্গণে আলোড়ন সৃষ্টি শুরু হয়। কায়কোবাদ মূলত একজন গীতিকবি। এছাড়া সনেট, মহাকাব্য, কাহিনীকাব্য ও গানেও ছিলেন সমানভাবে পারদর্শী, তৎকালীন সময়ে কবিমহলে ব্যাপক প্রসংশিত হয়ে ছিলেন মহাকবি কায়কোবাদ। মুসলমান কবিদের মধ্যে তিনিই প্রথম মহাকবি উপাধি লাভ করেন।

কবি তাঁর ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার অবহেলিত তার প্রমান হচ্ছে আগলা গ্রামে কবির তেমন কোন স্মৃতি চিহ্ন খোজে পাওয়া যায় না, আর যে স্মৃতিগুলো আছে সেগুলোও নিচিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কবির মৃত্যুর পর তার পৈতৃক বাড়ির একটি অংশ বিক্রি করলেও বাদবাকি অংশ বেদখল হয়ে আছে। কবির ভক্ত অনুরাগীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগলা গ্রামে এসে কোন স্মৃতিচিহ্ন না দেখে বিস্মিত হন।

২০০৬ সালে কবির বাড়ির সামনের রাস্তাটি কবির নামে একটি ফলক নির্মাণ করা হয়। ফলকটি এখন আর নেই, কে বা কারা ভেঙে ফেলেছে। ফলে রাস্তাটি যে কায়কোবাদের নামে করা তাও মুছে যাচ্ছে।

১৯৭২ সালে প্রাক্তন গণপরিষদ সদস্য আবু মো. সুবিদ আলী টিপু কবির সম্মনার্থে আগলা গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন কায়কোবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের পাঠাগারে কায়কোবাদের কোন বই নেই। যার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কবির সর্ম্পকে জানতে পারছে না।

কবির গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মহাকবির গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছে বলে নিজে থেকে গর্ববোধ মনে করি। কিন্তু কবি সর্ম্পকে আমরা তেমন কিছুই জানতে পারছি না। আর সেটা আমাদের লজ্জার ব্যাপার! কবির স্মৃতিকে সংরক্ষণ করতে হলে নবাবগঞ্জে একটি একাডেমি ও গণগ্রন্থাগার চালু করা দরকার।

কবির বাড়ির পশ্চিমে ১৯৮৩ সালে আগলা মাঝপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত করা হয় কায়কোবাদ যুব ক্লাব ও গণপাঠাগার। জায়গাটি বরাদ্দ দেন স্থানীয় জনৈক হরিষচন্দ্র পোদ্দার। গত ১০ বছর ধরে পাঠাগারটির সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে এলাকায় মাদকসেবীদের আড্ডাস্থানে পরিণত হয়েছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার চৌরাস্তায় কায়কোবাদের নামে গোল চত্বর নির্মাণ করা হলেও সেটি ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে স্বাধীনতা চত্বর। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে চত্বরটি পুনস্থাপনের দাবি জানিয়ে আসলেও দীর্ঘ ১০ বছরেও তা বসানোর কোন উদ্যোগ কেউ নেননি।

মহাকবির আত্মীয়দের দাবী, কবির বাড়িটি দখলমুক্ত করে করির নামে একটি পাঠাগার ও গবেষণাগার নির্মাণ হলে কবির সর্ম্পকে অজানা তথ্য জানা যাবে