চট্টগ্রাম 8:06 am, Tuesday, 3 December 2024

মিরসরাইয়ে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৬নং ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস ছালাম (ছালেক মেম্বার) এর বিরুদ্ধে অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযোগে সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়।

মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুর ১২ ঘটিকায় আব্দুস ছালাম (ছালেক মেম্বার) এর বিচারের দাবীতে মিরসরাই পৌরসদরের শহীদ মিনার এলাকায় মানববন্ধন করেছে স্থানীয় নির্যাতিতরা । এসময় তারা ছালেক বাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। স্থানীয়দের দাবী এধারা অব্যাহত থাকলে কিছুদিন পর ওই ওয়ার্ডে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা দুস্কর হয়ে পড়বে।

স্থানীয় গোপাল চন্দ্র দাস জানান, মিরসরাইয়ের ইছাখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চরশরৎ এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত। এখানকার বাসিন্দারা ছালেক মেম্বারের নানামুখী অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তার রয়েছে ১০/১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। ওই বাহিনী দিয়ে তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তিনি শারিরিক নির্যাতন, শালিস বাণিজ্য, চাঁদা আদায়, মাদক ব্যবসা সহ এমন কোন কাজ নেই যা সে করে না। এলাকায় আতংক সৃষ্টি করতে কখনো রাতে আবার কখনো দিনে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে সে মোটরসাইকেল শোডাউন দেয়। তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উপায়ন্ত না দেখে প্রতিকার চেয়ে গত ১৪ মে ভুক্তভোগী আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

স্থানীয় ভুক্তভোগী নিতাই দাসের স্ত্রী মমতা দাস জানান, কিছুদিন আগে আমার ৬টি মহিষ আটক করে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে ছালেক মেম্বার। আমি চড়া সুদে ৬০ হাজার ধার নিয়ে ছালেক মেম্বারের লোকদের হাতে তুলে দিয়েছি। শুধু আমি নই আরো অনেকের কাছ থেকে মহিষ আটক করে চাঁদা আদায় করেছে ছালেক বাহিনী।

স্থানীয় লক্ষী দাস বলেন, আমার দু’টি হাঁস নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া হওয়ায় ছালেক মেম্বার ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। আমি সম্মানের ভয়ে ধার করে তাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি।

স্থানীয় মাখন দাসের ছেলে লিংকন দাস বলেন, আমার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি তার গ্রুপের সদস্য সৈকত নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। পরে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে আমি মোটরসাইকেলটি ছাড়িয়ে আনি।

আরেক ভুক্তভোগী খোকন দাসের স্ত্রী রঙ্গা দেবী বলেন, আমার ছেলে দীনেশের সাথে বউদের ঝগড়া হওয়ায় লাঠি দিয়ে দীনেশকে পিটিয়ে আহত করে ছালেক মেম্বার। পরে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। আমি একশ টাকায় ৩ টাকা হার সুদে টাকা নিয়ে ছালেক মেম্বারকে দিয়েছি। এই মেম্বারের কারণে আমি একাধিকবার স্ট্রোক করেছি। আমি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

ভুক্তভোগী গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, গত ৮ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ছালেক মেম্বার দলবল নিয়ে এসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাকে আক্রমণ করে। সে আমাকে গুলি করে খুন করার হুমকি দেয়। এলাকার বাসিন্দারা তাকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন মানুষের নিরাপত্তর জন্য অথচ এখন তার অত্যাচার নির্যাতনে আমাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস ছালাম প্রকাশ ছালেক মেম্বার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বিভিন্ন সময় শালিসে হেরে যাওয়া লোকজন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, স্থানীয় মেম্বার আবদুস ছালামের বিরুদ্ধে দেওয়া চরশরৎ এলাকাবাসীর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য জোরারগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মনিরুল ইসলাম বলেন, মেম্বার আবদুস ছালাম (ছালেক মেম্বার) বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কাপ্তাই জামায়াতে ইসলামীর আমীর পুনঃনির্বাচিত হলেন শিক্ষাবিদ হারুনুর রশীদ

মিরসরাইয়ে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

Update Time : 09:55:10 pm, Tuesday, 21 May 2024

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৬নং ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস ছালাম (ছালেক মেম্বার) এর বিরুদ্ধে অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযোগে সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়।

মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুর ১২ ঘটিকায় আব্দুস ছালাম (ছালেক মেম্বার) এর বিচারের দাবীতে মিরসরাই পৌরসদরের শহীদ মিনার এলাকায় মানববন্ধন করেছে স্থানীয় নির্যাতিতরা । এসময় তারা ছালেক বাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। স্থানীয়দের দাবী এধারা অব্যাহত থাকলে কিছুদিন পর ওই ওয়ার্ডে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা দুস্কর হয়ে পড়বে।

স্থানীয় গোপাল চন্দ্র দাস জানান, মিরসরাইয়ের ইছাখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চরশরৎ এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত। এখানকার বাসিন্দারা ছালেক মেম্বারের নানামুখী অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তার রয়েছে ১০/১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। ওই বাহিনী দিয়ে তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তিনি শারিরিক নির্যাতন, শালিস বাণিজ্য, চাঁদা আদায়, মাদক ব্যবসা সহ এমন কোন কাজ নেই যা সে করে না। এলাকায় আতংক সৃষ্টি করতে কখনো রাতে আবার কখনো দিনে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে সে মোটরসাইকেল শোডাউন দেয়। তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উপায়ন্ত না দেখে প্রতিকার চেয়ে গত ১৪ মে ভুক্তভোগী আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

স্থানীয় ভুক্তভোগী নিতাই দাসের স্ত্রী মমতা দাস জানান, কিছুদিন আগে আমার ৬টি মহিষ আটক করে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে ছালেক মেম্বার। আমি চড়া সুদে ৬০ হাজার ধার নিয়ে ছালেক মেম্বারের লোকদের হাতে তুলে দিয়েছি। শুধু আমি নই আরো অনেকের কাছ থেকে মহিষ আটক করে চাঁদা আদায় করেছে ছালেক বাহিনী।

স্থানীয় লক্ষী দাস বলেন, আমার দু’টি হাঁস নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া হওয়ায় ছালেক মেম্বার ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। আমি সম্মানের ভয়ে ধার করে তাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি।

স্থানীয় মাখন দাসের ছেলে লিংকন দাস বলেন, আমার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি তার গ্রুপের সদস্য সৈকত নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। পরে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে আমি মোটরসাইকেলটি ছাড়িয়ে আনি।

আরেক ভুক্তভোগী খোকন দাসের স্ত্রী রঙ্গা দেবী বলেন, আমার ছেলে দীনেশের সাথে বউদের ঝগড়া হওয়ায় লাঠি দিয়ে দীনেশকে পিটিয়ে আহত করে ছালেক মেম্বার। পরে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। আমি একশ টাকায় ৩ টাকা হার সুদে টাকা নিয়ে ছালেক মেম্বারকে দিয়েছি। এই মেম্বারের কারণে আমি একাধিকবার স্ট্রোক করেছি। আমি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

ভুক্তভোগী গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, গত ৮ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ছালেক মেম্বার দলবল নিয়ে এসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাকে আক্রমণ করে। সে আমাকে গুলি করে খুন করার হুমকি দেয়। এলাকার বাসিন্দারা তাকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন মানুষের নিরাপত্তর জন্য অথচ এখন তার অত্যাচার নির্যাতনে আমাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস ছালাম প্রকাশ ছালেক মেম্বার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বিভিন্ন সময় শালিসে হেরে যাওয়া লোকজন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, স্থানীয় মেম্বার আবদুস ছালামের বিরুদ্ধে দেওয়া চরশরৎ এলাকাবাসীর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য জোরারগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মনিরুল ইসলাম বলেন, মেম্বার আবদুস ছালাম (ছালেক মেম্বার) বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।