চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি সহস্রাধিক পরিবার। পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেঙেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক এবং পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে রোপা আমন ও সবজি খেত। ভুক্তভোগী অনেকেই অভিযোগ করেছে সময়মতো ত্রাণ পাচ্ছেন না।
উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে খাল সংস্কার না থাকায় ও অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
বুধবার (৩ জুলাই) পানিবন্দি ৪৫০ পরিবারের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে বরে জানা যায়।অনেকে অভিযোগ করেছে ক্ষতি থেকে সাহায্য অপ্রতুল।
জানা গেছে, টানা ছয় দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার ,জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর, মিরসরাই পৌরসভার গোভানিয়া, কাটাছরা, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর ও সাহেরখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের বিভিন্ন স্থানে। সড়কে গর্তের কারণে অনেকটা চলাচলের অনুপযোগী জনবহুল বড়দারোগাহাট-বগাচতর সড়ক, জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট সড়ক। পানিবন্দি হয়ে আছে ফেনাপুনি, বামনসুন্দর মরগাং, আবুরহাট ও কাটাগাং, ইছাখালী গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার। চুলায় পানি ওঠায় রান্নাও বন্ধ।
ফেনাফুনী এলাকার স্থানীয়রা জানান খালের দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টি হলে তো ভোগান্তির শেষ থাকে না। কোমর পরিমাণ পানির কারণে চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেকে রান্না বন্ধ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হয়ে এক ছড়া দিয়ে যায়। কিন্তু ছড়ার মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ করে দখলের কারণে পানি যাওয়ার পথ বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি বছর বৃষ্টি হলে আমাদের গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত থাকে। অচিরেই খালের ওপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খাল সংস্কার করার জোর দাবি জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাল পার্শ্ববর্তী হাট-বাজারগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ দোকান-পাট ও স্থাপনা। এগুলোর কারণে বিভিন্ন খালে পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। ফলে প্রতি বছর নিম্নাঞ্চল এলাকা পানির নিচে ডুবে যায়। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের পথ না রেখে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে তোলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ও সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় দুই দিন বৃষ্টি হলেই পানি বাইরে চলে যায়। টানা ৬ দিন বৃষ্টি হওয়ায় মৎস্যচাষিদের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চাষি তাকে ক্ষতির বিষয়ে অবহিত করেনি বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, গত ৬ দিন টানা বৃষ্টিতে মিরসরাইয়ের অনেক এলাকায় পানি উঠে গেছে। বুধবার উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ২৫০ পরিবার ও ইছাখালী ইউনিয়নের ২০০ পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান ।