চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে দলবল নিয়ে ডাকাত সন্দেহে গণধোলাইয়ে মো. রফিক (প্রকাশ রফিক মেম্বার) নামের এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। মোঃ রফিক মিরসরাই উপজেলার ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়নের কাজীর তালুক এলাকার মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে। সাবেক ইউপি সদস্য মো. রফিক সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।
গণধোলাইয়ের পর হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। শনিবার রাত ৩ ঘটিকায় মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এসকিউ নামের একটি বৈদ্যুতিক সারঞ্জাম তৈরীর নির্মাণাধীন একটি কারখানার সামনে এ গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটে একি ঘটনায় আরো ৭ জন আহত হয়েছেন। এসময় তাদের বহন করা তিনটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও একটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
গত জোট সরকারের আমলে রফিক আর্মি খানের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের দস্যুতার অভিযোগ রয়েছে।
এসকিউ কারখানাটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. এহসানুল কবির বলেন, গত তিনমাসে তিন দফায় আমাদের কারখানায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তিন মাস আগে একবার কারখানায় ঢুকে নিরাপত্তাকর্মীদের বেঁধে ৮০ লাখ টাকার ক্যাবল নিয়ে যায় ডাকাত দল। এরমধ্যে গত ২৯ আগস্ট রাতে আমাদের ৭ জন নিরাপত্তাকর্মীকে বেঁধে বেদম মারধর করলেও জানাজানি হওয়ায় সেবার কিছু নিতে পারেনি।
জানা গেছে, শনিবার রাতে আ’লীগ নেতা নবির নিয়ন্ত্রাধীন একটি মৎস্য খামারে হানা দিয়ে ফেরার পথে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ১৪-১৫ জনের একটি ডাকাত দল উক্ত কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মীরা এলার্ম বাজায়। এতে আসপাশের কারখানার লোকজন ও রাতে খালে মাছ ধরতে আসা মানুষ ধাওয়া দিয়ে সিএনজি অটোরিক্সাসহ তাদের ধরে গণধোলাই দেয়। আহতদের চিকিৎসা দিতে নিয়ে যেতে চাইলে সকাল সাড়ে এগারটার দিকে আহত ব্যাক্তিদের স্বজনরা কারখানায় ঢুকে তাদের নিয়ে যায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেন।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের দায়িত্বপ্রপ্ত ডাঃ সিফাত সুলতানা বলেন, দুপুর সাড়ে বারটায় মো. কামাল নামের এক ব্যাক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। এখানে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিলো।
ঘটনায় জানা গেছে, গত ৫ আগষ্ট সরকারের পতনের পর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সাহেদ চৌধুরীর সমর্থক রফিক মেম্বার জোট এলাকায় নিজস্ব বাহিনী তৈরি করে এলাকা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছিলো। তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দখলের অভিযোগ আসছিলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের শিল্প পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শওকত হোসেন বলেন, নির্মাণাধীন এসকিউ কারখানাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ দুর্বল। আগেও একবার এ কারখানায় চুরির ঘাটনা ঘটেছে। শনিবার রাতেও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কিছু লোক কারখানায় প্রবেশের চেষ্টা করে বলে জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে কারখানার নিরাপত্তাকর্মী ও আসপাশের লোকজন মিলে ধাওয়া করে তাদের আটক করে মারধর করে আটকে রাখে। পরে গণদোলাইয়ে আহতদের একজন মো. রফিক হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। ঘটনার সময় রফিক মদ্যপ অবস্থায় ছিলো। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা দেশীয় অস্ত্র ও পুড়িয়ে ফেলা তিনটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা হেফাজতে নিয়েছি আমরা। জোরারগঞ্জ থানা পুলিশসহ এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এ ঘটনার পর রোববার দুপুরে কারখানা এলাকা পরিদর্শন করেন মিরসরাই সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার ল্যাপটেনেন্ট কর্ণেল আল মামুন, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর আমিন।
এবিষয়ে ল্যাপটেনেন্ট কর্ণেল আল মামুন বলেন, এসকিউ কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছি আমরা।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নিহত রফিক মেম্বর সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। ১৫ বছর আগে তাকে নিয়ে নানা দুর্নাম থাকলেও এখন সে ভালো মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বিএনপির যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রভাগের মানুষ সে। শনিবার রাতে ১৬ নং সাহেরখালী এলাকায় মাছের প্রকল্প নিয়ে তার সাথে কিছু লোকের ঝামেলা হয়েছিলো। সেখান থেকে রাতে ফেরার পথে এসকিউ কারখানা এলাকায় তাদের ধরে ডাকাতির প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে তাকে পরিকল্পতি ভাবে হত্যা করা হয়। এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আমি এ হত্যার সাথে জড়িতদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।