চট্টগ্রাম 5:42 pm, Wednesday, 4 December 2024

মিরসরাইয়ে বেজা’র অভিযান হাজার কোটি টাকার ‘মৎস্য জোন’ ক্ষতি’র সম্মুখীন

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ‘বেজা’র অব্যাহত অভিযানের ফলে মৎস্যজোন’ খ্যাত মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গড়ে ওঠা কয়েক হাজার কোটি টাকার মৎস্য শিল্প এখন ক্ষতির সম্মুখীন ।

মৎস্য ঘের এলাকায় ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)র প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের এ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার ও বুধবার সকাল থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সিডিএসপি বাঁধ ও সুপারডাইক এলাকার পাশে বেশ কিছু মৎস্য ঘেরের বাঁধ কেটে দেয়া হয়।

এতে স্থানীয় মাছ চাষীদের কয়েক কোটি টাকার মাছ পাশের সাগরে চলে যায় বলে অভিযোগ করেছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এতে মাছ চাষীরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে বেজা কর্মকর্তারা বলছেন এখানে সরকারি জমি দখল করে অবৈধ ভাবে মাছের ঘের তৈরি করা হয়েছে। পূর্বে তাদের সরে যেতে বলা হলেও তারা বেজার নির্দেশনার তোয়াক্কা করেনি। হাজারো মৎস্য চাষি এখন পথে বসার উপক্রম।

অন্যদিকে, এসব অভিযানকে অন্যায় আখ্যা দিয়ে বেজা কর্তৃপক্ষ নিজেদের অধিগ্রহণকৃত অঞ্চল চিহ্নিত না করে অযথা বৈধ মাছের ঘের ধ্বংস করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন মৎস্য চাষিরা। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনসহ এ মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন বলে জানান তারা।
তবে বেজা বলছে, তাদের অধিগ্রহণ করা জমিতে অবৈধভাবে মাছের ঘের গড়ে তোলায় তা ধ্বংস করা হচ্ছে।
এবিষয়ে মাছ চাষী আজমল হোসেন ও নুরুল আবছার অভিযোগ করেন, তারা ২০ বছরেরও অধিক সময় এখানে মাছ চাষ করছেন। বেজা কর্তৃপক্ষ কোনরকম পূর্বঘোষণা ছাড়া হঠাৎ মাছভর্তি ঘেরের পাড় কেটে দেয়। এতে তাদের কয়েক কোটি টাকার মাছ ও মাছের পোনা সাগরে পতিত হয়েছে।

ইছাখালী মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, সরকার বার বার বলছে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে কোন পুকুর ডোবা যাতে খালি না থাকে। ১৯৮৬-৮৭ সাল থেকে এখানে মাছ চাষ করছি আমরা। আজকে এটি একটি মৎস্যজোনে রূপান্তর হয়েছে। আমরা মাছ চাষিরা এখান থেকে বছরে ৪৯ হাজার মেট্রিকটন মাছের যোগান দিই। আমরা বেজাকে অনুরোধ করবো যেন অন্যায়ভাবে কোন মৎস্য ঘের উচ্ছেদ না করে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বেজার উপ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়াছিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এলাকায় অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে কিছু অসাধু লোক মাছের ঘের তৈরি করেছে। আমরা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মাছের ঘের অপসারণ করছি। তবে উচ্ছেদ কৃত স্থানে সরকারের বন্দোবস্তকৃত ভূমি ও মাছের ঘের রয়েছে কিনা তা জানা নেই।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও মিরসরাই ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৮৬-১৯৮৭ সাল থেকে উপজেলার মুহুরী প্রকল্প এলাকার ইছাখালী ও বাঁশখালী মৌজায় সমুদ্র তীরে জেগে ওঠা চর বন্দোবস্তি দেয় সরকার। প্রথম ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভূমিহীনদের মাঝে ১২শ একর। পরে ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৩শ একর, চিংড়ি চাষিদের মাঝে ১৩শ ৮৫ একর এবং সর্বশেষ ২০০৪-২০০৫ সালে ভূমিহীনদের মাঝে ২৫শ একর ভূমি বন্দবস্ত দেয় সরকার। পরবর্তীতে ৫ হাজার ৩শ ৮৫ একর পরিমাণের এসব ভূমিতে সমন্বিত মাছচাষ শুরু করে সরকারের বন্দবস্ত গ্রহীতারা। যা বর্তমানে দেশের বৃহত্তম মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।

মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মুহুরী প্রকল্প এলাকায় বছরে উৎপাদন হয় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ। যা চট্টগ্রাম জেলার মৎস্য খাদ্য চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ করে। আর এসব মাছের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ১’শ ২৭ কোটি টাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

মিরসরাইয়ে বেজা’র অভিযান হাজার কোটি টাকার ‘মৎস্য জোন’ ক্ষতি’র সম্মুখীন

Update Time : 12:10:18 pm, Saturday, 27 January 2024

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ‘বেজা’র অব্যাহত অভিযানের ফলে মৎস্যজোন’ খ্যাত মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গড়ে ওঠা কয়েক হাজার কোটি টাকার মৎস্য শিল্প এখন ক্ষতির সম্মুখীন ।

মৎস্য ঘের এলাকায় ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)র প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের এ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার ও বুধবার সকাল থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সিডিএসপি বাঁধ ও সুপারডাইক এলাকার পাশে বেশ কিছু মৎস্য ঘেরের বাঁধ কেটে দেয়া হয়।

এতে স্থানীয় মাছ চাষীদের কয়েক কোটি টাকার মাছ পাশের সাগরে চলে যায় বলে অভিযোগ করেছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এতে মাছ চাষীরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে বেজা কর্মকর্তারা বলছেন এখানে সরকারি জমি দখল করে অবৈধ ভাবে মাছের ঘের তৈরি করা হয়েছে। পূর্বে তাদের সরে যেতে বলা হলেও তারা বেজার নির্দেশনার তোয়াক্কা করেনি। হাজারো মৎস্য চাষি এখন পথে বসার উপক্রম।

অন্যদিকে, এসব অভিযানকে অন্যায় আখ্যা দিয়ে বেজা কর্তৃপক্ষ নিজেদের অধিগ্রহণকৃত অঞ্চল চিহ্নিত না করে অযথা বৈধ মাছের ঘের ধ্বংস করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন মৎস্য চাষিরা। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনসহ এ মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন বলে জানান তারা।
তবে বেজা বলছে, তাদের অধিগ্রহণ করা জমিতে অবৈধভাবে মাছের ঘের গড়ে তোলায় তা ধ্বংস করা হচ্ছে।
এবিষয়ে মাছ চাষী আজমল হোসেন ও নুরুল আবছার অভিযোগ করেন, তারা ২০ বছরেরও অধিক সময় এখানে মাছ চাষ করছেন। বেজা কর্তৃপক্ষ কোনরকম পূর্বঘোষণা ছাড়া হঠাৎ মাছভর্তি ঘেরের পাড় কেটে দেয়। এতে তাদের কয়েক কোটি টাকার মাছ ও মাছের পোনা সাগরে পতিত হয়েছে।

ইছাখালী মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, সরকার বার বার বলছে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে কোন পুকুর ডোবা যাতে খালি না থাকে। ১৯৮৬-৮৭ সাল থেকে এখানে মাছ চাষ করছি আমরা। আজকে এটি একটি মৎস্যজোনে রূপান্তর হয়েছে। আমরা মাছ চাষিরা এখান থেকে বছরে ৪৯ হাজার মেট্রিকটন মাছের যোগান দিই। আমরা বেজাকে অনুরোধ করবো যেন অন্যায়ভাবে কোন মৎস্য ঘের উচ্ছেদ না করে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বেজার উপ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়াছিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এলাকায় অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে কিছু অসাধু লোক মাছের ঘের তৈরি করেছে। আমরা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মাছের ঘের অপসারণ করছি। তবে উচ্ছেদ কৃত স্থানে সরকারের বন্দোবস্তকৃত ভূমি ও মাছের ঘের রয়েছে কিনা তা জানা নেই।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও মিরসরাই ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৮৬-১৯৮৭ সাল থেকে উপজেলার মুহুরী প্রকল্প এলাকার ইছাখালী ও বাঁশখালী মৌজায় সমুদ্র তীরে জেগে ওঠা চর বন্দোবস্তি দেয় সরকার। প্রথম ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভূমিহীনদের মাঝে ১২শ একর। পরে ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৩শ একর, চিংড়ি চাষিদের মাঝে ১৩শ ৮৫ একর এবং সর্বশেষ ২০০৪-২০০৫ সালে ভূমিহীনদের মাঝে ২৫শ একর ভূমি বন্দবস্ত দেয় সরকার। পরবর্তীতে ৫ হাজার ৩শ ৮৫ একর পরিমাণের এসব ভূমিতে সমন্বিত মাছচাষ শুরু করে সরকারের বন্দবস্ত গ্রহীতারা। যা বর্তমানে দেশের বৃহত্তম মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।

মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মুহুরী প্রকল্প এলাকায় বছরে উৎপাদন হয় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ। যা চট্টগ্রাম জেলার মৎস্য খাদ্য চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ করে। আর এসব মাছের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ১’শ ২৭ কোটি টাকা।