চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জামিনে এসে এক কিশোরীকে হুমকি দিচ্ছিল বখাটেরা। এতে ভয়ে ৪ মাস বিদ্যালয় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ওই কিশোরী (১৩)। গত বৃহস্পতিবার মিরসরাই থানা পুলিশ কিশোরীর বাড়িতে গেয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলে কিশোরী বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে ফের বখাটেরা আবার হুমকি প্রধান করে।
মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মায়ের গতিরোধ করায় তিন ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। (মামলা নং-০৮/৭৮)
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গজারিয়া এলাকার এতিম উল্লাহ হাজি বাড়ির মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে এমরান হোসেন বাদশাহ প্রকাশ শুভ (২০), মুরাদ আলী মিয়া বাড়ির ওসমান গণির ছেলে ও মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সাগর (২১), মহসিন আলী মেম্বার বাড়ির দুদু মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামছুদ্দিন প্রকাশ সালমান (২০), নসরত আলী হাজি বাড়ির নুজরুল ইসলামের ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রিফাত হোসেন (২০)। আসামিদের মধ্যে এতিম উল্ল্যাহ হাজি বাড়ির ওমর ফারুকের ছেলে মো. সবুজ (২৩) পলাতক।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর পরিবার ও পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ১২ মে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে সাধুরবাজার এলাকায় সবুজ (২১) ও শুভ (১৯) নামের দুই বখাটে মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় চুল ধরে টানাটানির একপর্যায়ে স্কুলছাত্রীর মাথার স্কাফ খুলে ফেলেন তারা। গাড়িতে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার পর গাড়ি দিয়ে চাপা দেওয়ারও চেষ্টা করেন তারা। পরে শিক্ষার্থীদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে বখাটেরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। তখন সহপাঠীরা ওই স্কুলছাত্রীকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
ঘটনার দিন বিকেলে মিরসরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা। অভিযোগের পর পুলিশ সবুজ নামের একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। আরেকজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। জামিনে এসে সবুজ ও শুভ দলবল নিয়ে বাড়ির আশপাশে এসে ঘরের চালে ঢিল ছুড়ে মারতে থাকেন এবং ওই কিশোরীকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেন।
মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে মাকে নিয়ে আজ স্কুলে আসে মেয়েটি। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বখাটেরা তার গতিরোধ করে।
মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আবু নছর রিপন বলেন, গ্রেফতার চারজনের মধ্যে তিনজন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে রয়েছেন। যদি অপকর্ম করেন এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এটির দায় সংগঠন বহন করবে না।
কিশোরীর বাবা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বখাটের ভয়ে ৪ মাস মেয়েকে বিদ্যালয়ে যেতে দেইনি। পুলিশে বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য বল্লেহ তারপরে পাঠাই তার মায়ের সাথে। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে আবারও আমার মেয়েকে হুমকিদে তারা। আমার স্ত্রীকে হত্যা করবে বলে হুমকিদে। পরে পুলিশকে জানালে তারা আসামীদেও গ্রেপ্তার করে। আমার কাছে টাকা নেই। অন্য জনের জমি চাষ করে খাই। আসামীরা আবার জামিনে এসে আমাকে মেরে ফেলবে। আমার ভয় লাগতেছে।’
কিশোরীর মা আকলিমা আক্তার বলেন,‘আামরা অনেক গরীব কোনো রকুম দিন যাপন করি। আমাদের একমাত্র সন্তানকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করার স্বপ্ন ছিল। বখাটেদের ভয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করিদেই। প্রশাসনের সহযোগীতায় আজকে স্কুলে যাওয়ার পথে আবার তারা হুমকি প্রধান করে। আমাদেরকে মেরে ফেলার হুমকিদে। পুলিশকে জানালে বখাটেদের থানায় নিয়ে যায়।’
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন বলেন, আকলিমা আক্তার তার মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ৫ জন বখাটে তাকে পথরোধ করে। তার মেয়েকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে থানায় কেনো অভিযোগ করা হয়েছে এই ধরনের জেরা করতে থাকে। ঘটনাটি জানার সাথে সাথে থানার পুলিশের টিম সহ স্থানীয় মেম্বার ও আওয়ামী লীগের নেতার সহযোগীতায় ৪ বখাটেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ওসি জানান