চট্টগ্রাম 2:57 am, Thursday, 5 December 2024

মির্জা আবু মনসুর-আবু আহমদকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে ১ নম্বর সেক্টরের জোনাল কমান্ডার মির্জা আবু মনসুর ও তাঁর পিতা মির্জা আবু আহমদকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলাবাসী।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা এগারোটা থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত শোকসভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এ দাবি জানান। শোকসভাটির আয়োজন করে চট্টগ্রামে কর্মরত ফটিকছড়িবাসী সাংবাদিকদের সংগঠন ফটিকছড়ি সাংবাদিক পরিষদ-চট্টগ্রাম।

সদ্য প্রয়াত সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও দানবীর মির্জা আবু মনসুরের শোকসভায় বক্তারা তাঁর স্মৃতিচারণ করে বলেন, দেশের জন্য ফটিকছড়ির মির্জা পরিবারের ভূমিকা ইতিহাসের আলোকে অনন্য। নতুন প্রজম্মকে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করতে তাদের মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। মির্জা আবু ও তাঁর চার সন্তান একাত্তরের রণাঙ্গণে শুধু যুদ্ধই করেননি তিনি শরণার্থীদের আশ্রয় এবং যুদ্ধ ফান্ডে অর্থ দিয়েও সহায়তা করেছেন। দেশের শিল্পায়ন এবং বাণিজ্যের প্রসারেও রয়েছে পরিবারটির অসামান্য অবদান।

ফটিকছড়ি সাংবাদিক পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি মহসীন কাজীর সভাপতিত্বে শোকসভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সিটি মেয়র ও ষাটের দশকের ছাত্রনেতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী, যুদ্ধকালীন সিইনসি কমান্ডার ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা মো. আকবর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার মো: ইদ্রিস, বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম আবু তাহের মাসুদ, অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ উদ্দিন মো. রেজা, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি মো: হাফিজুর রহমান, মির্জা আবু মনসুরের সন্তান মির্জা মো. মাজিদ, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী শিমুল শীল, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অ্যাডভোকেট মো. খোরশেদুল আলম টিপু ও এসএম সোহরাব উদ্দিন টুটুল।

এতে ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখেন মির্জা মনসুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ শায়েস্তা খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ ফারুক।

শোকসভায় মির্জা আবু মনসুরের স্মৃতিচারণ করেসাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মির্জা মনসুর স্কুলবেলা থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনাকাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যে ভূমিকা রেখেছেন তা ইতিহাসে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে আছে। কেউ তাঁকে মূল্যায়ন করুক আর না করুক ইতিহাস চলবে তার আপন গতিতে। তিনি এবং তাঁর পরিবার এ দেশের ইতিহাসের অংশ।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, মির্জা আবু আহমদ মুসলিম লীগের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য থাকাকালে তাঁর সন্তানরা ছাত্রলীগ করেছেন। তিনি কখনও ছেলেদের বাঁধা দেননি বরং ঊনসত্তরের উত্তাল সময় থেকে বঙ্গবন্ধুকে সহায়তা করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের পদ ছেড়ে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন চার সন্তানকে নিয়ে। দুইমাস ধরে হাজার হাজার শরণার্থীকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। রণাঙ্গণের জন্য অস্থায়ী সরকারকে টাকাও দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সাহসী ভূমিকা এবং অবদান রেখে গেলেও এই পরিবার কোনো স্বীকৃতির তোয়াক্কা করেননি। মির্জা আবু আহমদ এবং তাঁর সন্তান মির্জা মনসুরের রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী বলেন, মির্জা আবু মনসুরের অবদান স্বীকার করা আমাদের কর্তব্য। তাঁর বাবা এবং তাঁদের পরিবারের ঋণ কখনও শোধ হবার নয়। কর্মের মাধ্যমে তাঁরা দেশকে আলোকিত করেছেন। এখন আমাদের উচিত তাঁদের মূল্যায়ন করা।

 

যুদ্ধকালীন সিইনসি কমান্ডার ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু বলেন, এখন পদক এবং স্বীকৃতি যেভাবে দেয়া হয় তার প্রয়োজন মির্জা মনসুরের নেই। মির্জা মনসুরদের ত্যাগের সুফল আজকের বাংলাদেশ। যারা দেশ সৃষ্টি করেন তাদের বিদ্যমান প্রথায় মূল্যায়ন না হলেও তাদের আলোয় আলোকিত থাকবে দেশের ইতিহাস। তাঁরা ইতিহাসের বরপুত্র।

ভার্চুয়াল বক্তব্যে অধ্যক্ষ শায়েস্তা খান বলেন, মির্জা মনসুর দেশপ্রেমের আদর্শ হয়ে থাকবেন। একজন মানুষ কিভাবে সৎ, নিলোর্ভ থাকতে পারে তার প্রমাণ তিনি। জিয়া, এরশাদের লোভনীয় প্রলোভনে পা না দিয়ে নিজের আদর্শে আমৃত্যু অটুট থেকেছেন। লালন করে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে।

সভাপতির বক্তব্যে মহসীন কাজী স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মির্জা আবু মনসুর ও তাঁর বাবা মির্জা আবু আহমদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান। শোকসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হক, মির্জা মনসুরের বোন আবরারা বেগম, নিগার সুলতানা, পারভীন সুলতানা ও ছোটভাই মির্জা মো. আজগর।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

মির্জা আবু মনসুর-আবু আহমদকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

Update Time : 01:52:40 am, Sunday, 31 December 2023

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে ১ নম্বর সেক্টরের জোনাল কমান্ডার মির্জা আবু মনসুর ও তাঁর পিতা মির্জা আবু আহমদকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলাবাসী।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা এগারোটা থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত শোকসভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এ দাবি জানান। শোকসভাটির আয়োজন করে চট্টগ্রামে কর্মরত ফটিকছড়িবাসী সাংবাদিকদের সংগঠন ফটিকছড়ি সাংবাদিক পরিষদ-চট্টগ্রাম।

সদ্য প্রয়াত সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও দানবীর মির্জা আবু মনসুরের শোকসভায় বক্তারা তাঁর স্মৃতিচারণ করে বলেন, দেশের জন্য ফটিকছড়ির মির্জা পরিবারের ভূমিকা ইতিহাসের আলোকে অনন্য। নতুন প্রজম্মকে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করতে তাদের মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। মির্জা আবু ও তাঁর চার সন্তান একাত্তরের রণাঙ্গণে শুধু যুদ্ধই করেননি তিনি শরণার্থীদের আশ্রয় এবং যুদ্ধ ফান্ডে অর্থ দিয়েও সহায়তা করেছেন। দেশের শিল্পায়ন এবং বাণিজ্যের প্রসারেও রয়েছে পরিবারটির অসামান্য অবদান।

ফটিকছড়ি সাংবাদিক পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি মহসীন কাজীর সভাপতিত্বে শোকসভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সিটি মেয়র ও ষাটের দশকের ছাত্রনেতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী, যুদ্ধকালীন সিইনসি কমান্ডার ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা মো. আকবর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার মো: ইদ্রিস, বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম আবু তাহের মাসুদ, অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ উদ্দিন মো. রেজা, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি মো: হাফিজুর রহমান, মির্জা আবু মনসুরের সন্তান মির্জা মো. মাজিদ, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী শিমুল শীল, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অ্যাডভোকেট মো. খোরশেদুল আলম টিপু ও এসএম সোহরাব উদ্দিন টুটুল।

এতে ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখেন মির্জা মনসুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ শায়েস্তা খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ ফারুক।

শোকসভায় মির্জা আবু মনসুরের স্মৃতিচারণ করেসাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মির্জা মনসুর স্কুলবেলা থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনাকাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যে ভূমিকা রেখেছেন তা ইতিহাসে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে আছে। কেউ তাঁকে মূল্যায়ন করুক আর না করুক ইতিহাস চলবে তার আপন গতিতে। তিনি এবং তাঁর পরিবার এ দেশের ইতিহাসের অংশ।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, মির্জা আবু আহমদ মুসলিম লীগের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য থাকাকালে তাঁর সন্তানরা ছাত্রলীগ করেছেন। তিনি কখনও ছেলেদের বাঁধা দেননি বরং ঊনসত্তরের উত্তাল সময় থেকে বঙ্গবন্ধুকে সহায়তা করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের পদ ছেড়ে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন চার সন্তানকে নিয়ে। দুইমাস ধরে হাজার হাজার শরণার্থীকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। রণাঙ্গণের জন্য অস্থায়ী সরকারকে টাকাও দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সাহসী ভূমিকা এবং অবদান রেখে গেলেও এই পরিবার কোনো স্বীকৃতির তোয়াক্কা করেননি। মির্জা আবু আহমদ এবং তাঁর সন্তান মির্জা মনসুরের রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী বলেন, মির্জা আবু মনসুরের অবদান স্বীকার করা আমাদের কর্তব্য। তাঁর বাবা এবং তাঁদের পরিবারের ঋণ কখনও শোধ হবার নয়। কর্মের মাধ্যমে তাঁরা দেশকে আলোকিত করেছেন। এখন আমাদের উচিত তাঁদের মূল্যায়ন করা।

 

যুদ্ধকালীন সিইনসি কমান্ডার ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু বলেন, এখন পদক এবং স্বীকৃতি যেভাবে দেয়া হয় তার প্রয়োজন মির্জা মনসুরের নেই। মির্জা মনসুরদের ত্যাগের সুফল আজকের বাংলাদেশ। যারা দেশ সৃষ্টি করেন তাদের বিদ্যমান প্রথায় মূল্যায়ন না হলেও তাদের আলোয় আলোকিত থাকবে দেশের ইতিহাস। তাঁরা ইতিহাসের বরপুত্র।

ভার্চুয়াল বক্তব্যে অধ্যক্ষ শায়েস্তা খান বলেন, মির্জা মনসুর দেশপ্রেমের আদর্শ হয়ে থাকবেন। একজন মানুষ কিভাবে সৎ, নিলোর্ভ থাকতে পারে তার প্রমাণ তিনি। জিয়া, এরশাদের লোভনীয় প্রলোভনে পা না দিয়ে নিজের আদর্শে আমৃত্যু অটুট থেকেছেন। লালন করে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে।

সভাপতির বক্তব্যে মহসীন কাজী স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মির্জা আবু মনসুর ও তাঁর বাবা মির্জা আবু আহমদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান। শোকসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হক, মির্জা মনসুরের বোন আবরারা বেগম, নিগার সুলতানা, পারভীন সুলতানা ও ছোটভাই মির্জা মো. আজগর।