চট্টগ্রাম 7:14 pm, Wednesday, 9 October 2024

মীরসরাইয়ে’র জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়কের বেহাল দশা !

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ঘিরে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ-সোনাপুর সড়কটি কানেক্টিভিটি সড়কে রূপ নিচ্ছে। ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ এখন প্রায়ই শেষের দিকে।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক, রামগড় স্থল বন্দর (বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট) সড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিরবিচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি সৃষ্টি করতে সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। বিশেষ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, বন্দরনগর ও পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারকে বিবেচনায় নিয়ে জোরারগঞ্জ-সোনাপুর সড়কটি ১৮ ফুট থেকে পর্যায়ক্রমে ৩৬ ফুট প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। সড়কটি চালু হলে এই অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দরে সরবরাহ করাসহ চার লক্ষাধিক অধিবাসীর বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
অথচ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির জোরারগঞ্জ–মুহুরীপ্রজেক্টের দৈন্যদশা থেকে মুক্তি মিলছে না। সারাবছরই এ সড়কের বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরা থাকে। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে চার ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র–ছাত্রীরা চলাচল করেন। এছাড়া অথচ ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের লোকজনও সড়কটি ব্যবহার করা শুরু করেছেন। সড়কের সোনাগাজী অংশ সাজানো সড়ক আর এপারে জোরারগঞ্জ টু প্রজেক্ট প্রায় ৫ কিলোমিটার আবার ভাঙাচোরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বার বার সংস্কার করা হলেও তা বেশিদিন টিকছে না। না টেকার অন্যতম কারণ হিসেবে এলাকাবাসীর দাবি প্রতি রাতে কয়েকশ মাছ বোঝাই ট্রাক চলাচল করে। মাছের ড্রাম থেকে ক্যামিকেল যুক্ত পানি সড়কে পড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। তবে মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবি, সড়কটি সংস্কার নিম্নমানের হওয়ায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু মুহুরী প্রকল্পে হাজার হাজার একর মৎস্য ঘের আছে, তাই প্রকল্পের মাছগুলো এ সড়ক দিয়ে আড়তে নিতে হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কজুড়ে ছোট–বড় খানাখন্দ। হেলেদুলে চলাচল করছে সব ধরনের যানবাহন। বৃষ্টি হলে গর্তের মধ্যে পানি জমে থাকে। সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে ছোট–বড় দুর্ঘটনা। গর্তে পড়ে নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি দিয়ে মীরসরাইয়ের চারটি ইউনিয়ন ছাড়াও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন জোরারগঞ্জ টেঙটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, জোরারগঞ্জ মহিলা কলেজসহ বারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া মীরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজীর প্রায় ১২ হাজার একর খামারের মাছ ও খাদ্য পরিবহন করা হয় সড়কটি দিয়ে।

সড়কের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে পশ্চিম দিকে ইছামতি মন্দির পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক যাতায়াত উপযোগী থাকলেও বাকি চার কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দে ভরা। এর মধ্যে বিষুমিয়ারহাট থেকে আজমপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কে রয়েছে বড় বড় গর্ত। সড়কটি দিয়ে মিনিবাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়াও নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে প্রায় ৪০০ সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

জোরারগঞ্জ মুহুরীপ্রজেক্ট, টেকের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলাজুড়ে এমন খারাপ রাস্তা আর একটিও নেই। বলতে গেলে পেটের দায়ে চালকরা সড়কটিতে প্রাণ হাতে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রতিদিন গর্তে পড়ে গাড়ির চাকা ও নানা যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। আরেক অটোরিকশা চালক মনির আহম্মদ বলেন, দুই বছরে কয়েকবার সড়কটির কিছু অংশ সংস্কার হয়েছে। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হওয়ায় তাতে কোনো লাভ হয়নি।

৫ নং ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক বলেন, এ সড়কের কারণে আমদেরও কষ্টে যাতায়াত করতে হয়। উপজেলা সমন্বয় সভায় অনেকবার বলেছি। তিনি আরও বলেন, এটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে। এর আগে কয়েক দফায় সড়কটির কিছু অংশ সংস্কার হলেও নিম্নমানের কাজে এক মাসও টেকেনি।

৩ নং জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টার বলেন, নিম্নমানের কাজ এবং মুহুরী প্রজেক্ট এর মাছের গাড়ির ক্যামিকেলযুক্ত পানির জন্যই রাস্তা নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ।

এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রণি সাহা বলেন, জোরারগঞ্জ–মুহুরীপ্রজেক্ট সড়কটি ক্যামিকেল যুক্ত পানি পড়ে নষ্ট হয়। সংস্কার করলেও টেকে না।

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, এ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে জীবিত মাছ পরিবহন করা হয়। এসব যানবাহন থেকে নিয়মিত পানি ছিটকে পড়ায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

রাঙ্গুনিয়ায় ১৬২টি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন সেনাবাহিনীর, নাশকতার চেষ্টা কঠোর হাতে দমনের ঘোষণা

মীরসরাইয়ে’র জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়কের বেহাল দশা !

Update Time : 09:04:29 am, Wednesday, 25 October 2023

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ঘিরে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ-সোনাপুর সড়কটি কানেক্টিভিটি সড়কে রূপ নিচ্ছে। ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ এখন প্রায়ই শেষের দিকে।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক, রামগড় স্থল বন্দর (বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট) সড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিরবিচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি সৃষ্টি করতে সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। বিশেষ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, বন্দরনগর ও পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারকে বিবেচনায় নিয়ে জোরারগঞ্জ-সোনাপুর সড়কটি ১৮ ফুট থেকে পর্যায়ক্রমে ৩৬ ফুট প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। সড়কটি চালু হলে এই অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দরে সরবরাহ করাসহ চার লক্ষাধিক অধিবাসীর বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
অথচ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির জোরারগঞ্জ–মুহুরীপ্রজেক্টের দৈন্যদশা থেকে মুক্তি মিলছে না। সারাবছরই এ সড়কের বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরা থাকে। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে চার ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র–ছাত্রীরা চলাচল করেন। এছাড়া অথচ ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের লোকজনও সড়কটি ব্যবহার করা শুরু করেছেন। সড়কের সোনাগাজী অংশ সাজানো সড়ক আর এপারে জোরারগঞ্জ টু প্রজেক্ট প্রায় ৫ কিলোমিটার আবার ভাঙাচোরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বার বার সংস্কার করা হলেও তা বেশিদিন টিকছে না। না টেকার অন্যতম কারণ হিসেবে এলাকাবাসীর দাবি প্রতি রাতে কয়েকশ মাছ বোঝাই ট্রাক চলাচল করে। মাছের ড্রাম থেকে ক্যামিকেল যুক্ত পানি সড়কে পড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। তবে মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবি, সড়কটি সংস্কার নিম্নমানের হওয়ায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু মুহুরী প্রকল্পে হাজার হাজার একর মৎস্য ঘের আছে, তাই প্রকল্পের মাছগুলো এ সড়ক দিয়ে আড়তে নিতে হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কজুড়ে ছোট–বড় খানাখন্দ। হেলেদুলে চলাচল করছে সব ধরনের যানবাহন। বৃষ্টি হলে গর্তের মধ্যে পানি জমে থাকে। সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে ছোট–বড় দুর্ঘটনা। গর্তে পড়ে নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি দিয়ে মীরসরাইয়ের চারটি ইউনিয়ন ছাড়াও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন জোরারগঞ্জ টেঙটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, জোরারগঞ্জ মহিলা কলেজসহ বারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া মীরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজীর প্রায় ১২ হাজার একর খামারের মাছ ও খাদ্য পরিবহন করা হয় সড়কটি দিয়ে।

সড়কের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে পশ্চিম দিকে ইছামতি মন্দির পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক যাতায়াত উপযোগী থাকলেও বাকি চার কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দে ভরা। এর মধ্যে বিষুমিয়ারহাট থেকে আজমপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কে রয়েছে বড় বড় গর্ত। সড়কটি দিয়ে মিনিবাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়াও নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে প্রায় ৪০০ সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

জোরারগঞ্জ মুহুরীপ্রজেক্ট, টেকের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলাজুড়ে এমন খারাপ রাস্তা আর একটিও নেই। বলতে গেলে পেটের দায়ে চালকরা সড়কটিতে প্রাণ হাতে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রতিদিন গর্তে পড়ে গাড়ির চাকা ও নানা যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। আরেক অটোরিকশা চালক মনির আহম্মদ বলেন, দুই বছরে কয়েকবার সড়কটির কিছু অংশ সংস্কার হয়েছে। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হওয়ায় তাতে কোনো লাভ হয়নি।

৫ নং ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক বলেন, এ সড়কের কারণে আমদেরও কষ্টে যাতায়াত করতে হয়। উপজেলা সমন্বয় সভায় অনেকবার বলেছি। তিনি আরও বলেন, এটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে। এর আগে কয়েক দফায় সড়কটির কিছু অংশ সংস্কার হলেও নিম্নমানের কাজে এক মাসও টেকেনি।

৩ নং জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টার বলেন, নিম্নমানের কাজ এবং মুহুরী প্রজেক্ট এর মাছের গাড়ির ক্যামিকেলযুক্ত পানির জন্যই রাস্তা নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ।

এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রণি সাহা বলেন, জোরারগঞ্জ–মুহুরীপ্রজেক্ট সড়কটি ক্যামিকেল যুক্ত পানি পড়ে নষ্ট হয়। সংস্কার করলেও টেকে না।

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, এ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে জীবিত মাছ পরিবহন করা হয়। এসব যানবাহন থেকে নিয়মিত পানি ছিটকে পড়ায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা যাবে।