চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলে স্বপ্ন বুনছেন মুস্তাফিজুর রহমান ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জয়দেব । মাঠের পর মাঠ শোভা পাচ্ছে চোখ জুড়ানো সূর্যমুখী ফুল। ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন এ ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছে এখন দ্বীপের অনেকে।
গাছুয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে ১৪০ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করছেন জয়দেব ও তার মা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায়, শুধু সবুজ আর হলুদ ফুলের সমারোহ। সবুজ গাছের মাথায় সূর্যমুখীর হলুদ ফুলগুলো বাতাসে দুলছে। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছি আর প্রজাপতি। সেই দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য দেখতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ছবি তুলতে ভিড় করছে সব বয়সী মানুষ। সকাল বিকেল সন্ধ্যা পর্যন্ত দ্বীপের বিভিন্ন স্হান থেকে ছুটে আসে গাছুয়াতে সূর্যমুখী ফুল দেখতে।
জয়দেবের সূর্যমুখী বাগান ছাড়া ও এ বিলে আর ৩/৪ জন সূর্যমুখী চাষ করছেন, এখানের পুরো দিগন্ত জুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। সরেজমিনে আরো দেখা যায়, সূর্যের ঝলকানিতে হলুদ রঙে ঝলমল করছে চারপাশ। সূর্যের দিকে মুখ করে আছে ফুল, সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে হাসলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আবর্তনে তার দিক পরিবর্তন হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই হাজারও মানুষ ভিড় করছেন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য দেখতে। জয়দেব জানা আমি গতবছর এ জমিতে তরমুজ চাষ করছিলাম কিন্তু লাভের মুখ দেখিনি, আমার সব তরমুজ দুর্বত্বরা খেয়ে ফেলছে তাই কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা নিয়ে আমি এবার একশত চল্লিশ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করছি তাতে আমার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, আশা করি আমি দুই লক্ষ টাকার তৈল ঘরে তুলতে পারবো। জয়দেব আরো জানান আমি দারিদ্র্য পরিবারের সন্তান এসএসসি পাশের পর আমার ভিতরে লেখাপড়ার পাশাপাশি কিছু একটা করার স্বপ্ন জাগে, এসএসসি পাশ করে আমি আমার মায়ের সহযোগিতায় জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন প্রকারের কৃষি কাজ করতে থাকি, এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসারের সহযোগিতা আমরা সূর্যমুখী ও ভুট্টা চাষ করি, আশা করি ফলন ভালো হবে। কথা হয় জয়দেবের মা কাজল রায় (৪৭) সাথে তিনি বলেন আমরা কৃষি প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে যখন কৃষি চাষ করি তখন ছিলাম দারিদ্র্য কৃষক, এখন আমি মনে করি আমি একজন ধনী কৃষক, আমি পর পর দুবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ কৃষক নির্বাচিত হয়েছি। তিনি চাকুরীর পিছনে না দৌড়াই সবাই কে উদ্যেগতা হয়ে কৃষির প্রতি মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফ হোসেন বলেন
সূর্যমূখী তেলের নানা ধরনের উপকারি গুণাগুন রয়েছে যেমন জটিল ব্যাধি ক্যানসার প্রতিরোধ করতে খুবই পারদর্শী সূর্যমুখীর তেলে থাকা সেলেনিয়াম উপাদান। এবং এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উপাদান আমাদের মানসিক চাপ দূর করে। মাইগ্রেনের সমস্যা এবং আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এই উপাদান।হাড়ের সমস্যা সমাধানেঃহাড়ের জোড়ায় ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক আলসার, দেহের চামড়ায় জ্বালা-পোড়া, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ সারিয়ে তুলতে এই তেল খুবই উপকারী।শরীরের ব্যাথা ও ক্ষয় রোগ দূর করেঃ
এই বীজে আছে ভিটামিন-ই যা আমাদের দেহের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সেই সাথে সূর্যমুখী বীজের তেলে বিদ্যমান ভিটামিন-ই আমাদের ত্বককে রক্ষা করে সূর্যের আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি থেকে। ত্বকের অযথা বুড়িয়ে যাওয়া এবং ক্ষয় রোধে এই তেল খুবই উপকারী।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
সূর্যমুখী বীজ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দারুণভাবে কার্যকরী করে তোলে।পুষ্টিগুণে ভরপুরঃ
প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় সূর্যমুখী বীজের তেল আমাদের দুর্বলতা কাটাতে কার্যকরী। আমাদের দেহের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখতেও সূর্যমুখী তেলের ভূমিকা অনন্য।
এছাড়া সূর্যমুখী বীজ আমাদের দেহের হাড় সুস্থ রাখে ও মজবুত করে। আমাদের দেহে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপার এর চাহিদা পূরণ করে সূর্যমুখী তেল। এ ফুলটি রোপণ
৯০ – ১০০ দিনের মধ্যে হয় রবি মৌসুমে সন্দ্বীপে প্রচুর জমি অনাবাদী থাকে যা অল্প খরচে সূর্যমুখী চাষ করে লাভজনক হতে পারে।এ বছরে সন্দ্বীপে কৃষি প্রনোদনা ও উদ্ধুদ্ধকরণের মাধ্যমে ২৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে যা পরবতর্তী বছরে বাড়বে বলে আশাবাদী।