চট্টগ্রাম 4:03 am, Thursday, 5 December 2024

সন্দ্বীপে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার খেজুরের রস

সন্দ্বীপে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য সুস্বাদু খেজুরের রস। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুময় খেজুর গাছ এখন আর দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। দেখা মেলে না শীতের মৌসুম শুরু হতেই খেজুরের রস আহরণে গ্রামে গ্রামে খেজুর গাছ কাটার প্রস্তুতি নেয়া গাছিদের তোড়জোড়।

এখন শুধু দেখা যায় গাছিরা কোমরে দড়ির সাথে ঝুড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছে।

এখন আর চোখে পড়েনা গ্রামবাংলার সেই দৃশ্য, তেমনি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও। অথচ খেজুর গাছ হারিয়ে গেলে এক সময় হারিয়ে যাবে খেজুর রসের ঐতিহ্য।

সন্দ্বীপে খেজুর গাছ হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসাবে ধরা হয় বাড়ির পাশ বাড়ি করে ব খেজুর গাছ নিধন। এতে দিনে দিনে সন্দ্বীপে জুরে আশংকাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে খেজুরের গাছ।

এক সময় শীত মৌসুম এলেই দ্বীপ অঞ্চলে গাছিদের মাঝে খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যেতো। শীত এলেই এ অঞ্চলের সর্বত্র শীত উদযাপনের নতুন আয়োজন শুরু হয়ে যেত। খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যেতেন এ অঞ্চলের গাছি ও তাদের পরিবার।

শীতের সকালে বাড়ির উঠানে বসে মিষ্টি রোদের তাপ নিতে নিতে খেজুরের মিষ্টি রস যে পান করেছে, তার স্বাদ কোনও দিন সে ভুলতে পারবে না।

শুধু খেজুরের রসই নয়, এর থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু পাটালি, গুড় ও প্রাকৃতিক ভিনেগার। খেজুর গুড় বাঙ্গালীর সংস্কৃতির একটা অঙ্গ। খেজুর গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না।

শীতের দিন মানেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস ও গুড়ের ম-ম গন্ধ। খেজুর রসের পিঠা ও পায়েস তো দারুণ মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষির, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

গ্রামীণ জীবনের শীতের উৎসব শুরু হতো খেজুর গাছের রস দিয়ে। শীতের মৌসুম শুরু হতেই সারাবছর অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর বেড়ে যেত। দ্বীপ অঞ্চলের সেই চিত্র এখন আর চোখে পড়ে না। এখন আর আগের মত খেজুরের রসও তেমন নেই, নেই সে পিঠে পায়েসও।

সন্দ্বীপ উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে গত ৩০ বছর আগের তুলনায় এখন খেজুর গাছ আছে মাত্র ১০ শতাংশ, তবে বিচ্ছিন্ন উড়িরচর ইউনিয়নে এখনো খেজুর গাছের দেখা মিলে, হারামিয়া, রহমতপুর, আজিমপুর, সারিকাইত, মাইটভাংগা, আমানউল্লাহ, সন্তোষপুর, প্রায় বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ, তবে গাছুয়া ও বাউরিয়া ইউনিয়ন পরিদর্শন করে কিছু খেজুর গাছের দেখা মিলে, সুস্বাদু এই খেজুরের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হতো বিভিন্ন রকমের গুড়ের পাটালি ও নালি গুড়। গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) রসের জন্য বেঁধে রেখে, পরদিন সকালে কাঁচা রস সংগ্রহ করে মাটির হাড়িতে নিয়ে এসে হাট-বাজারে বিক্রি করতো। সেই সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করতো। ফলে সে সময় খেজুর গাছের কদরও ছিল বেশি। সন্দ্বীপ এক সময়ে বছর শেষে ঢাকা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্হান ও প্রবাসীরা আসতে ডিসেম্বর শেষে বিশেষ করে খেজুর রসের শিন্নি, খেজুর গুড়, সকালে চিতল পিঠা দিয়ে খেজুর মিঠা দিয়ে খাবে এ আশায় এখন আগের মত সে চিত্র আর চোখে পড়ে না, এখন খেজুর গাছ কমার কারণে শীতকালে আর সে আর আনন্দ আয়োজন ও কমছে।

গত সপ্তাহে বাউরিয়া ও গাছুয়া ইউনিয়নের গ্রামঘুরে দেখা যায়- এক গাছি খেজুর গাছের ছাল পরিস্কার করে তাতে নলি বসাচ্ছেন। এ সময় আলাপকালে গাছি নিজাম উদ্দীন (৬৪) জানায়, আগে আমাদের দারুণ কদর ছিল, মৌসুম শুরুর আগ হতেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খাজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু এখন আর কেউ ডাকে না। আগের মতো তেমন খেজুর গাছও নেই, আর গ্রামের লোকেরাও তেমন খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে চায় না। আমি বিগত ৪০ বছর যাবৎ খেজুর গাছ কাটি, চল্লিশ বছরে আগে কতগুলো খেজুর গাছ ছিল এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আগের ৫ ভাগের এক ভাগ খেজুর গাছ এখন নেই।

তিনি আরও জানান, আগে সকাল বেলা খেজুরের রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতাম। আয়ও হতো ভালো। গ্রামে-গ্রামে খেজুর গাছের মাথায় মাটির হাড়ি বেঁধে রাখা দেখে মন জুড়িয়ে যেত। এলাকার খেজুরের রস দিয়ে তৈরি ঝোলা গুড়ের সুনাম ওকদর ছিলো বরিশাল বিভাগ জুড়ে। মাত্র এক দশক আগেও জেলার গ্রামগুলোতে শীতের সকালে চোখে পরতো রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাকডাক

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

সন্দ্বীপে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার খেজুরের রস

Update Time : 07:38:26 pm, Wednesday, 4 January 2023

সন্দ্বীপে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য সুস্বাদু খেজুরের রস। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুময় খেজুর গাছ এখন আর দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। দেখা মেলে না শীতের মৌসুম শুরু হতেই খেজুরের রস আহরণে গ্রামে গ্রামে খেজুর গাছ কাটার প্রস্তুতি নেয়া গাছিদের তোড়জোড়।

এখন শুধু দেখা যায় গাছিরা কোমরে দড়ির সাথে ঝুড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছে।

এখন আর চোখে পড়েনা গ্রামবাংলার সেই দৃশ্য, তেমনি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও। অথচ খেজুর গাছ হারিয়ে গেলে এক সময় হারিয়ে যাবে খেজুর রসের ঐতিহ্য।

সন্দ্বীপে খেজুর গাছ হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসাবে ধরা হয় বাড়ির পাশ বাড়ি করে ব খেজুর গাছ নিধন। এতে দিনে দিনে সন্দ্বীপে জুরে আশংকাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে খেজুরের গাছ।

এক সময় শীত মৌসুম এলেই দ্বীপ অঞ্চলে গাছিদের মাঝে খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যেতো। শীত এলেই এ অঞ্চলের সর্বত্র শীত উদযাপনের নতুন আয়োজন শুরু হয়ে যেত। খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যেতেন এ অঞ্চলের গাছি ও তাদের পরিবার।

শীতের সকালে বাড়ির উঠানে বসে মিষ্টি রোদের তাপ নিতে নিতে খেজুরের মিষ্টি রস যে পান করেছে, তার স্বাদ কোনও দিন সে ভুলতে পারবে না।

শুধু খেজুরের রসই নয়, এর থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু পাটালি, গুড় ও প্রাকৃতিক ভিনেগার। খেজুর গুড় বাঙ্গালীর সংস্কৃতির একটা অঙ্গ। খেজুর গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না।

শীতের দিন মানেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস ও গুড়ের ম-ম গন্ধ। খেজুর রসের পিঠা ও পায়েস তো দারুণ মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষির, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

গ্রামীণ জীবনের শীতের উৎসব শুরু হতো খেজুর গাছের রস দিয়ে। শীতের মৌসুম শুরু হতেই সারাবছর অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর বেড়ে যেত। দ্বীপ অঞ্চলের সেই চিত্র এখন আর চোখে পড়ে না। এখন আর আগের মত খেজুরের রসও তেমন নেই, নেই সে পিঠে পায়েসও।

সন্দ্বীপ উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে গত ৩০ বছর আগের তুলনায় এখন খেজুর গাছ আছে মাত্র ১০ শতাংশ, তবে বিচ্ছিন্ন উড়িরচর ইউনিয়নে এখনো খেজুর গাছের দেখা মিলে, হারামিয়া, রহমতপুর, আজিমপুর, সারিকাইত, মাইটভাংগা, আমানউল্লাহ, সন্তোষপুর, প্রায় বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ, তবে গাছুয়া ও বাউরিয়া ইউনিয়ন পরিদর্শন করে কিছু খেজুর গাছের দেখা মিলে, সুস্বাদু এই খেজুরের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হতো বিভিন্ন রকমের গুড়ের পাটালি ও নালি গুড়। গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) রসের জন্য বেঁধে রেখে, পরদিন সকালে কাঁচা রস সংগ্রহ করে মাটির হাড়িতে নিয়ে এসে হাট-বাজারে বিক্রি করতো। সেই সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করতো। ফলে সে সময় খেজুর গাছের কদরও ছিল বেশি। সন্দ্বীপ এক সময়ে বছর শেষে ঢাকা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্হান ও প্রবাসীরা আসতে ডিসেম্বর শেষে বিশেষ করে খেজুর রসের শিন্নি, খেজুর গুড়, সকালে চিতল পিঠা দিয়ে খেজুর মিঠা দিয়ে খাবে এ আশায় এখন আগের মত সে চিত্র আর চোখে পড়ে না, এখন খেজুর গাছ কমার কারণে শীতকালে আর সে আর আনন্দ আয়োজন ও কমছে।

গত সপ্তাহে বাউরিয়া ও গাছুয়া ইউনিয়নের গ্রামঘুরে দেখা যায়- এক গাছি খেজুর গাছের ছাল পরিস্কার করে তাতে নলি বসাচ্ছেন। এ সময় আলাপকালে গাছি নিজাম উদ্দীন (৬৪) জানায়, আগে আমাদের দারুণ কদর ছিল, মৌসুম শুরুর আগ হতেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খাজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু এখন আর কেউ ডাকে না। আগের মতো তেমন খেজুর গাছও নেই, আর গ্রামের লোকেরাও তেমন খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে চায় না। আমি বিগত ৪০ বছর যাবৎ খেজুর গাছ কাটি, চল্লিশ বছরে আগে কতগুলো খেজুর গাছ ছিল এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আগের ৫ ভাগের এক ভাগ খেজুর গাছ এখন নেই।

তিনি আরও জানান, আগে সকাল বেলা খেজুরের রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতাম। আয়ও হতো ভালো। গ্রামে-গ্রামে খেজুর গাছের মাথায় মাটির হাড়ি বেঁধে রাখা দেখে মন জুড়িয়ে যেত। এলাকার খেজুরের রস দিয়ে তৈরি ঝোলা গুড়ের সুনাম ওকদর ছিলো বরিশাল বিভাগ জুড়ে। মাত্র এক দশক আগেও জেলার গ্রামগুলোতে শীতের সকালে চোখে পরতো রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাকডাক