চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ছেলে ও তাঁর স্ত্রীর নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাননি ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা মা। ভরণপোষণের জন্য টাকা চাওয়ায় ওই বৃদ্ধা মাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন তার ছোট ছেলে ফিরোজ । শনিবার সকালে সীতাকু- উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের পূর্ব লালানগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সীতাকুণ্ড মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী হতভাগা মা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলার ২নং বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের পূর্ব লালানগর এলাকার মৃত শাহাজাহান এর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে স্বামী শাহাজাহান মারা যান। বেশ সুখেই কাটছিলো তাদের সংসার। কিন্তু মেজ ছেলে ফয়জুল করিম এর বিয়ের পর ঘটে যত বিপত্তি। ফয়জুল করিমের স্ত্রী জিন্না সুলতানার উস্কানিতে গত ৮বছর যাবত মায়ের কোন ভরন পোষণ দেননা এবং চাইতে গেলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ মানষিক ভাবে নির্যাতন করে আসতেছে ছেলে ও ছেলের বউ। এবং ঔষধের টাকা চাইলে মাকে মরে যেতে বলে ছেলে ফয়জুল করিম। সাথে ছেলের বউ জিন্না সুলতানাও ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এমন সব ভাষা ব্যবহার করে যা অকল্পনিয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন শ্বাশুড়ী আনোয়ার বেগম। অভিযোগে আরও জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় ফয়জুল করিম ও তার স্ত্রীর পূর্বপরিকল্পনায় ছোট ছেলে ফিরোজের বসত ঘরের ঘিরা ভেঙ্গে ফেলার সময় মা বাধা দিতে গেলে ছেলের বউ জিন্না সুলতানা শ্বাশুড়ীর চুলের ঝুটি ধরে মাটিতে ফেলে দেয়, এবং ছেলে ফয়জুল করিম লাঠি দিয়ে শরীরে আঘাত করে নিলাফুলা জখমসহ মুখে রক্তাক্ত জখম করে মা আনোয়ারার। এসময় ছোট ছেলে বাঁচাতে আসলে তাকেও মারধর করে। অবশেষে প্রাণে বাঁচতে দৌড়ে পালিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা নেন তারা।
ছোট ভাই নুরুল আলম ফিরোজ বলেন, আমার মেজ ভাই ফয়জুল করিম মাকে এর আগেও পিটিয়েছে কিন্তু লজ্জায় আমরা গোপন করেছি। তার স্ত্রী জিন্না সুলতানা খুবই খারাপ, সে আমার ভাইয়ের বউ হয়ে ঘরে আসার পর থেকে সংসারে অশান্তি ও কলহ বিবাদ লেগে রয়েছে। শুধু ঘরে নয়, বাইরেও তার বদনাম রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক পরিচয়ের আড়ালে তার রয়েছে অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারীর মতো ঘটনা। সে সীতাকুণ্ড ব্লাড ডোনেট গ্রুপ নামক একটি স্বেচ্ছাসবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচয় দেন কিন্তু স্বেচ্ছাসেবীর মুখোশ পড়ে সে নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। সংগঠনের পরিচয় দিয়ে সদস্য সংগ্রহ করলেও কিছু দিন পরে সদস্যরা তার সাংগঠনিক অনিয়মের প্রতিবাদ করে তাকে ছেড়ে যায় এবং গত এক যুগে সীতাকুণ্ড ব্লাড ডোনেট গ্রুপ ভেঙ্গে ৭/৮টি সংগঠন হয়েছে। আমি মাকে মারার বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়জুল করিম মুঠোফোনে বলেন, আমি, মা ও ভাই একসাথে ছিলাম। আমি সেমিপাকা ঘর করায় সেখানে চলে যাই কিন্তু আমাদের টয়লেট ও টিউবওয়েল এখনো বসাতে না পারায় পুরনো গুলো ব্যবহার করতে আসলে আমার ভাই বাধাদেয় এবং স্থায়ীভাবে ঘিরাবেড়া দিয়ে দেয়। আমার স্ত্রী মহিলা মানুষ কোথায় যাবে তাই নিরুপায় হয়ে আমি পর্দা কেটে টয়লেট ব্যবহারের উপযোগী করে দিলে আমার ভাই ফিরোজ আমার স্ত্রীকে মারতে আসে, আমি বাধা দিতে গেলে আমার মায়ের গায়ে আঘাত লাগে এবং খুব জখম হয়।
এ বিষয়ে গ্রামের সরদার ননী সওদাগর বলেন, আমি তাদের পারিবারিক কলহের অনেক বিচার করেছি, কিন্তু তারা কেউ কাউকে মানে না। ফয়জুল করিম বেপরোয়া এবং তার স্ত্রী উশৃঙ্খল। সে শ্বাশুড়ীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তাদের কোন পরিবেশ নেই। ফয়জুল করিম এর চলাফেরায় ধর্মীয় লেবাস থাকলেও তার স্ত্রীর চলাফেরা নিয়ে গ্রামের মানুষ আমাকে অনেক অভিযোগ দিয়েছে যা আমি আপনাকে বলতে পারবো না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর বলেন, তাদের বেশ কয়েকবার সালিশী বৈঠকে আমি ছিলাম, অনোয়ারা বেগমের ছেলেরা কেউ কাউকে মানেনা। আমি তাদের বিচার আর করতে পারবোনা বলে জানিয়ে দিয়েছি।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার এসআই মহিউদ্দিন নাছিরউল্লাহ রুবেল (আইয়ু)বলেন, আমি চট্টগ্রাম আদালতে এসেছি সকালে, এখন থানায় আসতেছি। এসে অভিযোগের বিষযে দেখবো।