হাটহাজারীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সময় ডাকাত দলকে চিনে ফেলায় ভিকটিমকে ছুরিকাঘাতে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী দিদারুল আলম(৪৫) কে দীর্ঘ ২০ বছর পর গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭ এর সদস্যরা।
বুধবার (১৭ মে) সকাল ১১ টার দিকে র্যাব-৭ কর্তৃপক্ষ আটকের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকাল পাঁচটার দিকে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, গত ২০০৩ সালের ২৫ নভেম্বর রাত দেড়টার দিকে দুুর্ধর্ষ একদল ডাকাত উপজেলার হাটহাজারী টু মোহাম্মদপুর গামী রাস্তায় অবস্থান নিয়ে সাধারণ লোকজনকে আটক করে তাদের হাত পা বেধে নির্যাতন ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ার সময় ভুক্তভোগী নিহত ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম অন্যান্যদের মত উক্ত রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তখন উক্ত ডাকাত দল রাস্তা ব্লক করে ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে তার সাথে থাকা টাকা পয়সা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ভিকটিম জাহাঙ্গীর ডাকাত দলের সদস্যদের চিনে ফেলে এবং চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। এসময় ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের পায়ের উরুতে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে আহত করে পালিয়ে যায় ডাকাতদল। ভিকটিমের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাকে মূমুর্ষ অবস্থায় এবং ভুক্তভোগী আরো ৭/৮ জনকে হাত-পা বাধা ও আহত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে এগিয়ে আসা স্থানীয়রা ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করে। ওখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতের প্রতিবেশী ওই রাতে ডাকাতদের কবলে পড়া মোঃ ফজল আহাম্মদ ড্রাইভার বাদী হয়ে গত ২০০৩ সালের ২৯ নভেম্বর হাটহাজারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ২৯/১১/২০০৩ ইং, মামলা হবার পর ঐদিন রাতেই উপজেলার ফটিকার মৃত সৈয়দ আহম্মদের পুত্র আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদারকে পুলিশ গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠিয়ে দেয়। কিছুদিন জেল হাজতে থাকার পর আসামী দিদারুল আলমের জামিন হয়। পরবর্তী সময়ে জামিনে আসা আসামী দিদারুল আলম হাজিরা না দেয়ায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করলে আটক এড়াতে আত্নগোপনে চলে যায়। এদিকে ২০২২ সালের ৩০ মে বিজ্ঞ আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এবং দীর্ঘ বিচার কার্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ওই মামলায় আসামী দিদারুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ০৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। এবং ৩৯৪/৩৪ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদন্ডসহ বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর থেকেই আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদারকে গ্রেফতারের লক্ষে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামী দিদারুল আলমকে চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গী বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আটককৃতের বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি এবং মাদক সংক্রান্ত আরও অন্তত ০৩ টি মামলা আছে বলে সূত্রে জানা গেছে।