জলাধার সংরক্ষণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চলছে একশ বছরের পুরানো একটি পুকুর ভরাট। পৌরসদরের নামার বাজারস্থ আমিরাবাদ গ্রামের (নামার বাজার ল্যাবরেটরীর মসজিদের দক্ষিণ পাশে) ঐতিহ্যবাহী একটি শতবর্ষী পুকুরের ৫ শতাংশ ইতিমধ্যে মাটি ফেলে ভরাট করে দালান নির্মাণ করছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। কেটে ফেলা হয়েছে পুকুর পাড়ের বেশ কিছু গাছও।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শতবর্ষী ওই পুকুরটিতে ট্রাকে করে মাটি ফেলে দেয়াল নির্মাণ হচ্ছে। এ সময় পুকুরপাড়ে কেটে ফেলা গাছপালার ঢালও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে থাকা আরও গাছপালা কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসীর দাবী পুকুরটি শুধু ঐতিহাসিক নয়, বরং এলাকার পরিবেশ ও জলের স্তর রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। পুকুরটি প্রায় একশ বছর আগে খনন করা হয়েছিল বলে জানান স্থানীয় প্রবীণরা। দীর্ঘদিন ধরে এটি আশেপাশের বসবাসকারীদের পানির চাহিদা মেটাত এবং বর্ষার জলনিস্কাশনের একটি প্রাকৃতিক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, শতবর্ষী পুকুরটা আমাদের দাদারাও ব্যবহার করতেন। এখন এটি ভরাট করে দালান তৈরী করার চেষ্টা চলছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি বলেন, শতবর্ষী পুকুরটি মূলত সুবত দাশ বাড়ীর পুকুর নামে পরিচিত। কিন্তু বংশ পরমপরায় ভাগ বাটোয়ারা হওয়ার পর একটি অংশ হেদায়েত ক্রয় করে আরো কিছু লোক মিলে মাটি দিয়ে ভরাট করে দালান নির্মাণ করতেছে বলে জেনেছি।
এলাকাবাসী পুকুরটি রক্ষায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টা আপনার কাছ থেকে জেনেছি। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এ ধরনের জলাধার ভরাট শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধও।