চট্টগ্রাম 6:15 pm, Tuesday, 3 June 2025

সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন আপস নয়- বিমানবাহিনী প্রধান

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় উন্নয়নশীল দেশ। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এই মূলনীতি অনুসরণ করি। তবে আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসান মাহমুদ খাঁন এসব কথা বলেন।

আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর প্রধান ৮৮তম বিএমএর দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি কৃতী ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

এয়ার চিফ মার্শাল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রজ্ঞা, কর্তব্যবোধ, বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এসেছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মাতৃভূমির প্রতিটি ধূলিকণা অক্ষুণ্ন রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সদা তৎপর। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘তাঁদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠা আমাদের জন্য চিরকালীন অনুপ্রেরণা।

হাসান মাহমুদ খাঁন আরও বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গৌরবময় ভূমিকা রেখে চলেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি দায়িত্বশীল ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শুধু বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলা নয়, বরং জাতীয় দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির মতো সংকটে অসামরিক সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়াতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে এয়ার চিফ মার্শাল বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইনডিজেনাস ক্যাপাসিটি বিল্ডিং পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বাড়ছে, অপরদিকে পরনির্ভরশীলতা কমছে। সেই সঙ্গে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হচ্ছে।

এ সময় বিমানবাহিনীর প্রধান সেনাবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের আজকের এই কমিশন প্রাপ্তি জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায়। আজ থেকে তোমাদের কাঁধে অর্পিত হলো মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সততা, একাগ্রতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের মাধ্যমে তোমরা দেশ ও জাতির জন্য সেবা করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

হাসান মাহমুদ আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনশীল, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, সাইবার যুদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক কৌশলের যুগে সেনাবাহিনীকে হতে হবে আরও সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও প্রযুক্তিসম্পন্ন। ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে সম্মিলিত ও যৌথ প্রশিক্ষণনির্ভর। তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বা ‘জয়েন্টনেস’ সাফল্যের পূর্বশর্ত।

অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, কৃতী ক্যাডেটদের অভিভাবক, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কুচকাওয়াজ শেষে বিমানবাহিনীর প্রধান প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের জন্য বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

প্রসঙ্গত, ৮৮তম বিএমএর দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজে বাংলাদেশসহ বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডেটরাও অংশ নেন, যা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

নবাবগঞ্জের শোল্লা ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণ চোলাই মদ ও মাদক তৈরির উপকরণ উদ্ধার 

সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন আপস নয়- বিমানবাহিনী প্রধান

Update Time : 11:34:35 am, Thursday, 29 May 2025

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় উন্নয়নশীল দেশ। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এই মূলনীতি অনুসরণ করি। তবে আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসান মাহমুদ খাঁন এসব কথা বলেন।

আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর প্রধান ৮৮তম বিএমএর দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি কৃতী ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

এয়ার চিফ মার্শাল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রজ্ঞা, কর্তব্যবোধ, বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এসেছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মাতৃভূমির প্রতিটি ধূলিকণা অক্ষুণ্ন রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সদা তৎপর। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘তাঁদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠা আমাদের জন্য চিরকালীন অনুপ্রেরণা।

হাসান মাহমুদ খাঁন আরও বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গৌরবময় ভূমিকা রেখে চলেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি দায়িত্বশীল ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শুধু বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলা নয়, বরং জাতীয় দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির মতো সংকটে অসামরিক সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়াতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে এয়ার চিফ মার্শাল বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইনডিজেনাস ক্যাপাসিটি বিল্ডিং পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বাড়ছে, অপরদিকে পরনির্ভরশীলতা কমছে। সেই সঙ্গে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হচ্ছে।

এ সময় বিমানবাহিনীর প্রধান সেনাবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের আজকের এই কমিশন প্রাপ্তি জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায়। আজ থেকে তোমাদের কাঁধে অর্পিত হলো মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সততা, একাগ্রতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের মাধ্যমে তোমরা দেশ ও জাতির জন্য সেবা করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

হাসান মাহমুদ আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনশীল, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, সাইবার যুদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক কৌশলের যুগে সেনাবাহিনীকে হতে হবে আরও সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও প্রযুক্তিসম্পন্ন। ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে সম্মিলিত ও যৌথ প্রশিক্ষণনির্ভর। তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বা ‘জয়েন্টনেস’ সাফল্যের পূর্বশর্ত।

অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, কৃতী ক্যাডেটদের অভিভাবক, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কুচকাওয়াজ শেষে বিমানবাহিনীর প্রধান প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের জন্য বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

প্রসঙ্গত, ৮৮তম বিএমএর দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজে বাংলাদেশসহ বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডেটরাও অংশ নেন, যা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।