চট্টগ্রাম 12:54 am, Tuesday, 24 June 2025

সন্দ্বীপে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বিএনপি নেতাকর্মীরা; হত্যা মামলায় দিয়ে হয়রানি অভিযোগ

সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের কোরাইল্লা খালকে কেন্দ্র করে সংঘটিত এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ২২ জুন বেলা ১২ টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ও সারিকাইত ইউনিয়নসহ সকল ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপি দিয়ে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ঘটনার পটভূমি: গত ০৪ মে ২০২৫ তারিখে ইউএনও কার্যালয় হতে স্মারক নং- ০৫.৪২.১৫৭৮.০০০.০৫.০০৩.২৫-২৩১ অনুযায়ী মগধরা ইউনিয়নের ০৯ নম্বর ওয়ার্ডের কোরাইল্লা খাল ও এর সংলগ্ন অংশে মৎস্য আহরণের জন্য স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীরকে সরকারিভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে খালটির দখল নিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জামশেদুর রহমান ও তার তিন পুত্র রিফাত, মাহিন ও রিয়াদ। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা একাধিকবার আলমগীরকে খাল থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

মারামারি ও মর্মান্তিক মৃত্যু: এ উত্তেজনার প্রেক্ষিতে গত ১৯ মে ২০২৫ সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে মগধরা ০৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে জামশেদুর রহমানের ছেলে রিফাত গুরুতর আহত হন এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

হত্যা মামলা ও প্রতিহিংসার অভিযোগ: ঘটনার জের ধরে ২৪ মে সন্দ্বীপ থানায় মামলা নং-০৯ (জি.আর ৫৮/২৫) হিসেবে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। তবে মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের বাদ দিয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, সারিকাইত ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচিত সেক্রেটারি শওকত আলী রাজু ও মগধরা ইউনিয়নের সেক্রেটারি মো. আলমগীরকে যথাক্রমে ১ ও ৫ নম্বর আসামি করা হয়।

অথচ ঘটনার সময় শওকত আলী রাজু শিবের হাটে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করছিলেন এবং মো. আলমগীর ইউএনও কার্যালয়ে একটি সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, যা প্রশাসনের জ্ঞাত ছিল। এমনকি পুলিশের এএসআই শাহ পরাণ স্বয়ং ফোন করে শওকত আলী রাজুকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। মো. আলমগীরকেও ইউএনও’র মৌখিক নির্দেশে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।

হয়রানির শিকার আরও নেতাকর্মীরা: এ মামলায় আরও যেসব স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: মো. ফুলমিয়া (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক), মামলায় ২ নম্বর আসামি মো. জাবেদ (যুবদল নেতা), ৩ নম্বর আসামি ওমর ফারুক সুমন (যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক), ৮ নম্বর আসামি মো. দিলদার হোসেন রিপন (ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক), ১১ নম্বর আসামি মো. রুবেল (যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক), ১২ নম্বর আসামিমো. জাহাঙ্গীর (বিএনপি সদস্য), ১৫ নম্বর আসামি মো. ইলিয়াস (বিএনপি সদস্য), ১৬ নম্বর আসামি

উল্লেখ্য, প্রত্যেকেই ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না এবং তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে বলেই দাবি করেছে বিএনপি।

বিএনপির দাবি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা: স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, উক্ত খাল সংক্রান্ত ঘটনায় শওকত আলী রাজু, মো. আলমগীরসহ অন্যান্য আসামিদের কোনো ধরনের আর্থিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক স্বার্থ ছিল না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদেরকে হয়রানি করার জন্য এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, যেন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি থেকে রক্ষা করা হয় এবং প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

স্মারক লিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন সারিকাইত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজী হানিফ, মগধরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফখরুল ইসলাম, রহমতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামান মামুন, সাধারণ সম্পাদক সফিকুর রহমান, বাউরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সালাউদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান জন্টু, গাছুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রজিম, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সন্তোষপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সামছুদ্দীন মেম্বার, সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত হোসেন, আমানউল্লাহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন বাহাদুর, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মেম্বার, দীর্ঘাপাড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ফুলমিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ, হরিশপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইউছুপ আলী মেম্বার , সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন মেম্বার, আজিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন রিপন, হারামিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সোলাইমান বাদশা, সাধারণ সম্পাদক ইদ্রীস আলম, মাইটভাংগা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম রাজু, উড়িরচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিম, কালাপানিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির বাহার, সাধারণ সম্পাদক হাজী নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সারা দেশের মতো সন্দ্বীপেও অনুষ্ঠিত হলো “কাব কার্নিভাল ২০২৫”

সন্দ্বীপে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বিএনপি নেতাকর্মীরা; হত্যা মামলায় দিয়ে হয়রানি অভিযোগ

Update Time : 08:12:22 pm, Monday, 23 June 2025

সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের কোরাইল্লা খালকে কেন্দ্র করে সংঘটিত এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ২২ জুন বেলা ১২ টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ও সারিকাইত ইউনিয়নসহ সকল ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপি দিয়ে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ঘটনার পটভূমি: গত ০৪ মে ২০২৫ তারিখে ইউএনও কার্যালয় হতে স্মারক নং- ০৫.৪২.১৫৭৮.০০০.০৫.০০৩.২৫-২৩১ অনুযায়ী মগধরা ইউনিয়নের ০৯ নম্বর ওয়ার্ডের কোরাইল্লা খাল ও এর সংলগ্ন অংশে মৎস্য আহরণের জন্য স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীরকে সরকারিভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে খালটির দখল নিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জামশেদুর রহমান ও তার তিন পুত্র রিফাত, মাহিন ও রিয়াদ। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা একাধিকবার আলমগীরকে খাল থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

মারামারি ও মর্মান্তিক মৃত্যু: এ উত্তেজনার প্রেক্ষিতে গত ১৯ মে ২০২৫ সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে মগধরা ০৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে জামশেদুর রহমানের ছেলে রিফাত গুরুতর আহত হন এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

হত্যা মামলা ও প্রতিহিংসার অভিযোগ: ঘটনার জের ধরে ২৪ মে সন্দ্বীপ থানায় মামলা নং-০৯ (জি.আর ৫৮/২৫) হিসেবে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। তবে মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের বাদ দিয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, সারিকাইত ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচিত সেক্রেটারি শওকত আলী রাজু ও মগধরা ইউনিয়নের সেক্রেটারি মো. আলমগীরকে যথাক্রমে ১ ও ৫ নম্বর আসামি করা হয়।

অথচ ঘটনার সময় শওকত আলী রাজু শিবের হাটে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করছিলেন এবং মো. আলমগীর ইউএনও কার্যালয়ে একটি সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, যা প্রশাসনের জ্ঞাত ছিল। এমনকি পুলিশের এএসআই শাহ পরাণ স্বয়ং ফোন করে শওকত আলী রাজুকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। মো. আলমগীরকেও ইউএনও’র মৌখিক নির্দেশে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।

হয়রানির শিকার আরও নেতাকর্মীরা: এ মামলায় আরও যেসব স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: মো. ফুলমিয়া (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক), মামলায় ২ নম্বর আসামি মো. জাবেদ (যুবদল নেতা), ৩ নম্বর আসামি ওমর ফারুক সুমন (যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক), ৮ নম্বর আসামি মো. দিলদার হোসেন রিপন (ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক), ১১ নম্বর আসামি মো. রুবেল (যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক), ১২ নম্বর আসামিমো. জাহাঙ্গীর (বিএনপি সদস্য), ১৫ নম্বর আসামি মো. ইলিয়াস (বিএনপি সদস্য), ১৬ নম্বর আসামি

উল্লেখ্য, প্রত্যেকেই ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না এবং তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে বলেই দাবি করেছে বিএনপি।

বিএনপির দাবি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা: স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, উক্ত খাল সংক্রান্ত ঘটনায় শওকত আলী রাজু, মো. আলমগীরসহ অন্যান্য আসামিদের কোনো ধরনের আর্থিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক স্বার্থ ছিল না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদেরকে হয়রানি করার জন্য এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, যেন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি থেকে রক্ষা করা হয় এবং প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

স্মারক লিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন সারিকাইত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজী হানিফ, মগধরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফখরুল ইসলাম, রহমতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামান মামুন, সাধারণ সম্পাদক সফিকুর রহমান, বাউরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সালাউদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান জন্টু, গাছুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রজিম, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সন্তোষপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সামছুদ্দীন মেম্বার, সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত হোসেন, আমানউল্লাহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন বাহাদুর, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মেম্বার, দীর্ঘাপাড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ফুলমিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ, হরিশপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইউছুপ আলী মেম্বার , সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন মেম্বার, আজিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন রিপন, হারামিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সোলাইমান বাদশা, সাধারণ সম্পাদক ইদ্রীস আলম, মাইটভাংগা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম রাজু, উড়িরচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিম, কালাপানিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির বাহার, সাধারণ সম্পাদক হাজী নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।