আমাদের সময় পত্রিকার সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ও সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম চৌধুরীর ছেলে রাকিবুল হাসান রাব্বিকে পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনয়নের লক্ষ্যে সাংবাদিক পিতা স্থানীয় সুমনের ভিসায় মক্কা পাঠায়। কথা ছিল মক্কার স্হায়ী চাকুরীর ভিসা এবং ২৩ শত রিয়েল ও অভারটাইম সহ ২৭শত রিয়েল বেতন দেবে । কিন্তু সৌদীতে এসে রাব্বীকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকুরী না দিয়ে এক সাপ্লাই কোম্পানীতে বিক্রি করে দেয়। যেখানে দুই মাস বসে থাকার পর দৈনিক ১৪ঘন্টা কাজ করে বেতন পায় সৌদি ৯ শত রিয়েল যা বাংলাদেশী মুদ্রায় মাত্র ২৬ হাজার টাকা। সৌদীআরবে হাঁড় ভাঁঙা পরিশ্রম করে কলুর বলদের মত খাঁটুনী খেঁটে যে বেতন পায় রাব্বী সে টাকায় তার বাসা ভাড়া খাওয়া ধাওয়া নেট ইত্যাদী মিলে খরচই হয়ে যায়। বাড়ীতে মাসে ৫হাজার টাকাও পাঠাতে পারে না সে। সাপ্লাই সার্ভিস কোম্পানী এক বছর আকামাবিহীন থাকার পর নিজের মোটা আংকের টাকা খরচ করে আকামা করে সে। বর্তমানে সে দুঃশ্চিন্তায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই বেতনে তো খেয়ে দেয়ে সংসারে অবশিষ্টাংশ পাঠানো সম্ভব নয়। সার্ভিস কোম্পানিতে বিক্রির পর ভিসা দাতা সুমন বলেছিল কয়েক মাস কাজ করার পর অন্য জায়গায় ভাল বেতনে কাজ ঠিক করে নিয়ে যাবে। দেড় বছরেও সে কাজ দিতে পারেনি।
শুধু হাসিবুল হাসান রাব্বী না , অভিনব কায়দায় স্বর্গরাজ্যও সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে গত দু’বছর ধরে পবিত্র মক্কানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, কপি শপ, রেস্টুরেন্টে লাভজনক বেতনের লোভনীয় অফারে লোক নিয়োগের নামে সীতাকুণ্ডের অগনিত যুবকদের বাংলাদেশ থেকে এনে শুরু থেকেই টর্চার সেলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সীতাকুণ্ড পৌরসদরের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা উত্তর বাইপাস ইসমাইল মিস্ত্রীর বাড়ীর ফখরুদ্দিন সুমনের বিরুদ্ধে।
অন্য ভুক্তভোগী ৪নং মুরাদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড দোয়াজিপাড়ার বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল হুদার চাচাত ভাই দিদার খান কাঁদতে কাঁদতে প্রতারক ফখরুদ্দীন সুমনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তা রীতিমত লৌমহর্ষক ঘটনা বৈ কি!
দিদার খান বলেন, যেদিন আসলাম সেদিন একটা রুমে রেখে চলে গেল সুমন। তিনদিন তো কোন খাবারও দেয়নি। তিনদিন পর এসে ভিসার সকল টাকা পরিশোধ করবার পরও আরো অতিরিক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করে এবং জিম্মি করে রাখে আগত সকলকে। বেশ কিছুদিন এভাবে যাওয়ার পর কোন চাকুরী ছাড়াই রুম থেকে বের করে দেয়া হলো। অনিন্দ্রা, অনাহার, রুম ছাড়াই মক্কার রাস্তায় দুঃশ্চিন্তায় তার হার্টএট্যাকের মত পরিস্হিতির উদ্ভব হলে এক অপরিচিত বাংলাদেশীর দয়ায় এ যাত্রায় সে বেঁচে যায় এবং ঐ আগুন্তুক প্রবাসীর করুনায় অবৈধ হয়েও এখনো একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন চরম ঝুঁকিতে। যে কোন সময় ধরাপড়ার আতংকে সে কিংকর্তৃব্যবিমূঢ়! যে কোন সময় আইন শৃংখলা বাহিনী ধরে ফেরত পাঠাতে পারে দেশে। সে প্রতারক সুমনের বিচারের দাবী করছে।
একই কায়দায় দোয়াজী পাড়া এলাকার শাহজাহান শুভকে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতারক সুমন সৌদি আরব নিয়ে যায়। ব্রাক ব্যাংক থেকে কিস্তিতে ঋন নিয়ে শুভ ভিসার টাকা পরিশোধ করে। মক্কায় যাওয়ার পর তিন মাস বসিয়ে রেখে অবশেষে একটি গাড়ীর শো-রুমে গাড়ী মুছার কাজ দেয় মাত্র এক হাজার রিয়েল বেতনে।অথচ কথা ছিল ১৫ শত রিয়েল বেতন দিবে।
সাংবাদিক কাইয়ুম প্রতারক ফখরুদ্দীন সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তার বাবার সাফ জবাব দেন তার ছেলে প্রতারক। সে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারিত করেছে আমি তাকে মৌখিক ত্যাজ্য পুত্র করেছি। শীঘ্রই লিখিতভাবেও ত্যাজ্যপূত্র করবো। তার স্ত্রীও চলে গেছে এসব অপকর্মের কারনে বলে জানান সুমনের বাবা।
তিনি বলেন, সৌদীতে প্রথমে ইন্দোনেশিয়ান মেয়ে বর্তমানে রোহিঙ্গা মেয়ে বিয়ে করেছে। গত দেড় বছর ধরে পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ নাই। একইভাবে সাংবাদিক কাইয়ুম চৌধুরী ও প্রতারক সুমনকে শাস্তির আওতায় আনার দাবী জানান।
এদিকে গত দু’মাস পূর্বে সীতাকুণ্ডের ৬নং ইউনিয়নের বাঁশবাড়ীয়ার ইন্জি. মো. ইউসুফের ভাতিজা ও ভাগিনা যথাক্রমে জাহেদ হোসেন ও নাফিস হোসেন রিয়াদকে ঢাকায় মেডিকেল টেস্ট করিয়ে দু’জন থেকে জরুরী ভিত্তিতে ভিসা লাগানোর কথা বলে এক লাখ করে দু’লাখ টাকা অগ্রীম নেয়। ভিসা ভূল লেগেছে, ডলার এন্ডোজ করে ঠিক করেছে কাল বা পরশু ভিসা কপি ও পাসপোর্ট ডেলিভারী পৌঁছানো হবে ইত্যাদী গত দেড়মাস ধরে বলেই যাচ্ছিল প্রতারক সুমন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বহু ওয়াদা করে শেষতক: রোববার তাদের টাকা পরিশোধ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও টাকা দেয়নি।
ঢাকায় এজেন্সীর সাকিবের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার দায়িত্ব কেবল মেডিকেল করানো। মেডিকেল ফিট হওয়ার পর ভিসা লাগানোর দায়িত্ব ছিল প্রতারক সুমনের। সে ভিসা পাঠায়নি তাই সে লাগাইতে পারেনি বলে জবানবন্দি দেয় প্রতিবেদককে।
প্রতারক সুমনের এহেন ঘটনার শিকার এমন আরো অগনিত যুবক সৌদীতে আছে যারা মানবেতর জীবন যাপন করছে, এমনটি দাবী করছে ক্ষতিগ্রস্ত যুবকরা।
সীতাকুণ্ডের ছেলে হয়ে সীতাকুণ্ডসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষগুলোকে প্রবাসে চাকুরীর নামে এনে হয়রানী ও বিপদগ্রস্ত করছে কেন জানার জন্যে গত ১০-১২ ধরে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও প্রতারক সুমনের সদুত্তুর পাওয়া যায়নি।
ভূক্তভোগীদের মতে, প্রতারক ফখরুদ্দিন সুমন এর প্ররোচণায় আর একজন মানুষও যেন বাংলাদেশ থেকে সৌদীআরব এসে হয়রানী ও চক্রান্তের শিকার না হয় সে বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে।
সৌদীআরবের বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন আদম ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার নেশার খপ্পরে পড়ে নন স্কিল্ড লোকদের এনে যেমন তাদেরকে অবৈধভাবে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে তেমনী সৌদীআরবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। আর এসবের জন্য দায়ী প্রতারক সুমনের মত ফড়িয়া আদম ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে সৌদীআরবের বিভিন্ন শহর উপ-শহরে বাংলাদেশী নারী শ্রমিক ও পুরুষ শ্রমিকদেরকেও সৌদীআরবের বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখা যায়। এমন দু’জন নারী ও একজন পুরুষের বক্তব্য আদম ব্যবসায়ীরা আমাদের সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে সৌদীআরবের রাস্তায় নামিয়ে দেয়। ভিক্ষা ছাড়া তাদের আর কি বা করার আছে!
প্রতারক সুমনসহ সকল আদম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্হা গ্রহন করবার জন্য সৌদীআরবস্হ বাংলাদেশ দূতাবাস ও দেশীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্হার প্রতি আশু প্রতিকার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহনে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগী পরিবার।
সৌদীআরবস্হ বাংলাদেশ দূতাবাস এর শ্রম কাউন্সিলর রেজা-ই-রাব্বী বলেন, সৌদীআরবের রিপোটেড ও ওয়েল স্টাবলিস্ট কোম্পানি ব্যতীত এবং স্কিল্ড লেবার ছাড়া সৌদীআরব আসা উচিত নয়।
তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত: ব্যবস্হা নিবে দূতাবাস। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ দূতাবাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও হুন্ডিরোধে করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি।