চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় রাজারহাট ইছামতী নদীর তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে প্রত্ন নির্দশনযুক্ত চাকমা রাজপ্রসাদের ধ্বংসাবশেষ। অযত্নে-অবহেলায় নিশ্চিহ্ন প্রায় রাজপ্রসাদটি। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ধুঁকে ধুঁকে হারিয়ে যাওয়ার পথে সপ্তদশ শতাব্দীর এই রাজবাড়ীটি। এক সময়ের প্রাসাদটির ঐতিহ্য রাজ দরবার, হাতি-ঘোড়ার পিলখানা, বিখ্যাত সাগরদীঘি, পুরাকীর্তি, বৌদ্ধ-বিহারসহ গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হারিয়ে গেলেও ঠিকে আছে শুধু ৩০০ বছর ধরে চলে আসা বৈশাখী মেলা। ব্যতিক্রম হয়নি এ বছরেও, গেল বছরের তুলনায় আরো বড় পরিসরে নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে বসেছে প্রাচীন এই মেলা।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া চাকমা রাজার ”স্বতন্ত্র রাষ্ট্রভূমিতে” সপ্তদশ শতাব্দীর প্রায় তিনশত বছর আগে রাণী কালিন্দি প্রাচীন বাংলার রাজধানী রাজানগরে বৈশাখী মেলা প্রবর্তন করেন। তখন মেলা মাসব্যাপী ছিল। মেলায় উপজেলার সরফভাটার ভূমিরখীলের বাসিন্দা রাজকবি আবদুল হাকিমের তত্ত্বাবধানে পুঁথি পাঠের ও কবি গানের আসর বসানো হতো। ভারতবর্ষের বিভিন্ন কবিরা এই মেলায় আসতেন। রাঙ্গুনিয়া তথা রাঙ্গানাইয়া রাষ্ট্রের প্রজারা হেডম্যান, কার্বারীরা, তালুকদারগণ রাজপূন্যাহ অনুষ্ঠানে রাণীকে খাজনা দিতেন।পরবর্তীতে কালিন্দি রাণীর মৃত্যুর পর সবকিছু থমকে গেলেও বন্ধ হয়নি বৈশাখী মেলার। আধুনিকায়নের এই যুগেও প্রাচীন এই লোকজ মেলা এখনো চালু আছে। তবে মেলা বসে একদিনের জন্য। এদিন তিন পার্বত্য জেলা থেকে চামকা সম্প্রদায়ের মানুষ মেলায় ভীড় করেন। এছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকেও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ আসেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লতা-গুল্মে আচ্ছাতিদ হয়ে কালের সাক্ষি হয়ে এখানো দাঁড়িয়ে আছে ইট-সুরকি দিয়ে নির্মিত লোহাবিহীন অট্টালিকাটি। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ধুয়ে বর্তমানে প্রাসাদটির নড়বড়ে অবস্থা। এটিকে ঘিরে চারপাশে মেলা বসেছে। মেলায় বাহারি পন্যের সমাগম হয়েছে। তবে প্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ নিষেধ আছে। যারা আসছেন সবাই বাইরে থেকে মেলা ঘুরে চলে যাচ্ছেন। কেউ ভিতরে ঢুঁ মারতে চাইলেও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের সাথে কথা হয়, দাবী একটাই মেলার পাশাপাশি এটি সংস্কারের মাধ্যমে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
রাঙ্গামাটি থেকে আসা জ্যোতিশ চাকমা নামে একজন বলেন, আমরা মেলা উপলক্ষে প্রতিবছর আসি। কালিন্দি রাণীর সমাধি রাজ প্রাসাদের পাশে আছে। সমাধি এবং রাজবাড়ীকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুললে স্মৃতি হিসেবে এটি থেকে যাবে। পাশাপাশি মেলাও যেন চালু থাকে।
দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহমদ সৈয়দ তালুকদার বলেন, অনেক আগে থেকে এই মেলা চালু আছে। বর্তমানে তাদের বংশধর রুমেল দেওয়ানের তত্ত্বাবধানে মেলা হচ্ছে। পরিষদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গ্রামপুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর এই মেলা চালু থাকবে।