দেশব্যাপী খ্যাতি রয়েছে রাজশাহীর আম ও দিনাজপুরের লিচু। আর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষা এই দুই ঋতুতে আমের ফলন হয়। গোপালভোগ, হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ নানা প্রজাতির আম সারাদেশেই বিক্রি হয়।
কিন্তু আমগুলো ফরমালিনমুক্ত নাকি যুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে অনেকের। তাই সারাদেশে ফরমালিনমুক্ত আম সরবরাহের উদ্যোগ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ উদ্যোক্তা ফরহাদ হোসেন। ফরহাদের বাড়ি মীরসরাই উপজেলার ১৪ নং হাইকান্দি ইউনিয়নের তুলাবাড়িয়া গ্রামে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র সে। উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে কথা বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়ি। শুরুতে প্রচুর লড়াই করতে হয় নিজের সঙ্গে। এ লড়াই ছিল টিকে থাকার লড়াই।কারণ অষ্টম শ্রেণি থেকে টিউশন করিয়ে নিজের খরচ বহন করে আসছি। রাজশাহীতে আসার পর দেখলাম রাজশাহীতে টিউশন তেমন একটা নেই। অন্য আয়ের ও তেমন একটা উৎস নেই।ছোটবেলা থেকে বাবার ব্যবসায়ের সহযোগিতা করায় ব্যবসায়ের কিছু ধারণা ছিল ফেসবুক পাতায় ‘রাজশাহীর আম সারাদেশে সরবরাহ করলে কেমন হবে?’ এমন একটি পোস্ট দেই। তখন আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, ভাই, বন্ধু, শিক্ষকসহ অনেকেই প্রেরণা দিয়েছেন। সেই চিন্তা থেকেই আমি পূর্ণ উদ্যমে কাজ করতে শুরু করি। প্রথম বছরেই আমাদের এই উদ্যোগ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত টাইমলাইন ব্যবহার করে মৌসুমি ফল বিক্রি করেছি।অনলাইনে অর্ডার কেটে কুরিয়ারে এবং বাসে ঢাকা চট্টগ্রাম বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেছি।
আমরা সবসময় বাছাইকৃত বিশুদ্ধ আম সরবরাহ করার চেষ্টা করেছি। এজন্য একজন ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অনেকবার অর্ডার পেয়েছি। অল্প পরিসরে লিচু এবং জাম সরবরাহের কাজও করেছি। তবে এই ফল গুলো খুবই সেনসেটিভ ফল। এটা নিয়ে কাজ করা খুবই ঝুকিপূর্ণ।বিগত বছরগুলোতে দেশের সব জেলায় আম পৌঁছে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। সেই সঙ্গে যারা আমাদের কাছ থেকে আম নিয়েছেন তারাও সন্তুষ্ট। সব মিলিয়ে আমাদের চমৎকার অভিজ্ঞতা। পড়াশোনার পাশাপাশি এই ব্যবসায়ে ভালো করছি।দেড় বা দুই মাসের ইনকাম দিয়ে যারা বছরের পড়ার খরচ উঠে যায়। ব্যবসায়ে আরো কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। পণ্য সরবরাহে ২ জন ডেলিভারি ম্যান কাজ করে। রাজশাহীতে বাগানে সহযোগিতা করার জন্য একজন সাথে থাকে।এখানে শেখার অনেক কিছু আছে। নিয়মিত শেখার চেষ্টা করছি। ধৈর্য, পরিশ্রম ও ইচ্ছা থাকলে এই ব্যবসায়ে সফল হওয়া সম্ভব।
গত বছর সারাদেশে প্রায় ২৫-২৬ হাজার কেজি আম সরবরাহ করেছি।সবার আস্থা আর ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের প্রোডাক্টের মান ঠিক রেখে আমরা সামনের দিনগুলোতে আরও দৃঢ়ভাবে কাজ করতে চাই।পড়াশোনা শেষ করে এই ব্যবসায়ে নিযুক্ত থাকতে চাই।