চট্টগ্রাম 7:43 pm, Wednesday, 9 October 2024

গুমাই বিলে সোনালী ধানে কৃষকের মুখে হাসি : মনে শঙ্কা

চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলে কৃষকদের মধ্যে উৎসবের আমেজে ধান কাটার ধুম লেগেছে। গুমাইবিলে উঁকি দেয়া সোনালী ধানের ঝিলিক মারা হাসির মত আমনের ব্যাপক ফলনে কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসি। গুমাই বিলের পাশাপাশি উপজেলার অন্যান্য কৃষি জমিতেও চলছে ধান কাটার উৎসব।ব্যাপক ফলনে আবার আশংকাও আছে কৃষকদের মনে, দাম নিশ্চিতে বাজার মনিটরিং এর আহবান জানান কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে রাঙ্গুনিয়ায় আবাদি জমির পরিমান ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর। এরমধ্যে গুমাই বিলে এ বছর মোট আবাদি জমির পরিমান ৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমি।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকালে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে রাঙ্গুনিয়ার নিশ্চিন্তাপুর পাহাড়ের পাদদেশে চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার দিগন্ত জুড়ে সোনালি ধানে ভরে গেছে গুমাইয়ের মাঠ। হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধানের ছড়া। টিয়ে পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে মাঠে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে যেদিকে দুচোখ যাচ্ছে, কেউ ধান কাটছে আবার কেউ ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাঝে মাঝে বিল থেকে মাথায় কিংবা কাঁধে বোঝাই করে কৃষক নিয়ে আসছে কাটা ধানের বড় বড় আঁটি। ধান কাটতে গিয়ে কিংবা কাটা ধান আনতে গিয়ে অনেক কৃষক গলা ছেড়ে গাইছেন গান। হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠছেন কৃষক। যেন সোনালী ধানে নাচছে গুমাই, স্বপ্নভরা চোখে হাসছে কৃষক।

ধান মাড়াই, খড়খুটো বাছাই ও রোদে শুকিয়ে গোলায় ধান তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষক লোকমান। তার ঘরে চলছে এখন সোনালী উৎসবের আমেজ। তিনি জানান, আমি প্রতি বছর ৮০০ শতক জমিতে ধান চাষ করতাম। তবে সব কিছুর দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এবার ৪০০ শতকে করেছি। এবার উচ্চ ফলনশীল পাঞ্জা ধানের চাষ করেছি। প্রতি বছর সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ন্যায্য দাম পায় না। তাই এবছর ধান সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করবো।

মহাজন বটতল এলাকার কৃষক আলী হোসেন (৫০) প্রায় ১৫ কানি (৬০০ শতক) জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন। তিনি চাষ করেছেন সাদা পাঞ্জা ধানের। তিনি, প্রতি কানি জামিতে ৭০-৮০ আড়ি করে ধান হয়েছে বলে আশা ব্যক্ত করেন। বীজ, সার, কীটনাশক এবং মজুরি মিলিয়ে প্রতি কানিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ন্যায্য দাম পেলে প্রতি খানির ধান বিক্রি করে তিনি ২০ হাজার টাকা পাবেন বলে জানান।

গুমাই বিলে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার উত্তম কুমার বলেন, গত রোববার আমন ধান বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী প্লটের নমুনা শস্য কর্তন করা হয়েছে। ব্রিধান ৫১ জাতের নমুনা শস্য কর্তনে দেখা যায়, ২০ বর্গমিটারে ১৬.২৮০ কেজি (কাঁচা) ফলন হয়েছে। যেখানে উপস্থিত আর্দ্রতা ১৬.৭%। ১২% আর্দ্রতায় ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৭০ মেট্রিক টন এবং ১৪% আর্দ্রতায় ফলন ৭.৮৮ মেট্রিক টন। চালে ৫.২২ মেট্রিক টন। যেখানে গবেষণাগারে বলা হয়েছে, ফলন ৪.৫-৫ মেট্রিক টন হবে, সেখানে আমরা ফলন পেয়েছি ৭.৮৮ মেট্রিক টন। অন্যদিকে এ্যারাইজ এজেড-৭০০৬ হাইব্রিড জাতের ধান কাটার পর হেক্টর প্রতি ৮.৭ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, ঐতিহ্যবাহী গুমাই বিল সহ উপজেলার অন্যান্য কৃষি জমিতে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। ঘরে ঘরে এখন নতুন ধানের ঘ্রাণ। আমরা সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শন করছি, এর মধ্যে যা কাটা হয়েছে তাতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করি, এবারও ধানের উৎপাদন বরাবরের মতো রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। কৃষকের মনে যে ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশংকা এই বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা আছে। আশা করি তারা ন্যায্য দাম পাবেন।

অনুকূল আবহাওয়ায় আমনের বাম্পার ফলন, সিন্ডিকেটের শঙ্কা সব মিলিয়ে ধান কাটার মাধ্যমে শুরু হয়েছে নবান্না উৎসবের। গুমাইয়ের বুকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষক। সে নয়নাভিরাম দৃশ্য প্রকৃতিকে করে তুলেছে আরো মনোমুগ্ধকর৷

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

রাঙ্গুনিয়ায় ১৬২টি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন সেনাবাহিনীর, নাশকতার চেষ্টা কঠোর হাতে দমনের ঘোষণা

গুমাই বিলে সোনালী ধানে কৃষকের মুখে হাসি : মনে শঙ্কা

Update Time : 10:49:47 pm, Sunday, 20 November 2022

চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলে কৃষকদের মধ্যে উৎসবের আমেজে ধান কাটার ধুম লেগেছে। গুমাইবিলে উঁকি দেয়া সোনালী ধানের ঝিলিক মারা হাসির মত আমনের ব্যাপক ফলনে কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসি। গুমাই বিলের পাশাপাশি উপজেলার অন্যান্য কৃষি জমিতেও চলছে ধান কাটার উৎসব।ব্যাপক ফলনে আবার আশংকাও আছে কৃষকদের মনে, দাম নিশ্চিতে বাজার মনিটরিং এর আহবান জানান কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে রাঙ্গুনিয়ায় আবাদি জমির পরিমান ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর। এরমধ্যে গুমাই বিলে এ বছর মোট আবাদি জমির পরিমান ৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমি।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকালে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে রাঙ্গুনিয়ার নিশ্চিন্তাপুর পাহাড়ের পাদদেশে চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার দিগন্ত জুড়ে সোনালি ধানে ভরে গেছে গুমাইয়ের মাঠ। হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধানের ছড়া। টিয়ে পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে মাঠে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে যেদিকে দুচোখ যাচ্ছে, কেউ ধান কাটছে আবার কেউ ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাঝে মাঝে বিল থেকে মাথায় কিংবা কাঁধে বোঝাই করে কৃষক নিয়ে আসছে কাটা ধানের বড় বড় আঁটি। ধান কাটতে গিয়ে কিংবা কাটা ধান আনতে গিয়ে অনেক কৃষক গলা ছেড়ে গাইছেন গান। হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠছেন কৃষক। যেন সোনালী ধানে নাচছে গুমাই, স্বপ্নভরা চোখে হাসছে কৃষক।

ধান মাড়াই, খড়খুটো বাছাই ও রোদে শুকিয়ে গোলায় ধান তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষক লোকমান। তার ঘরে চলছে এখন সোনালী উৎসবের আমেজ। তিনি জানান, আমি প্রতি বছর ৮০০ শতক জমিতে ধান চাষ করতাম। তবে সব কিছুর দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এবার ৪০০ শতকে করেছি। এবার উচ্চ ফলনশীল পাঞ্জা ধানের চাষ করেছি। প্রতি বছর সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ন্যায্য দাম পায় না। তাই এবছর ধান সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করবো।

মহাজন বটতল এলাকার কৃষক আলী হোসেন (৫০) প্রায় ১৫ কানি (৬০০ শতক) জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন। তিনি চাষ করেছেন সাদা পাঞ্জা ধানের। তিনি, প্রতি কানি জামিতে ৭০-৮০ আড়ি করে ধান হয়েছে বলে আশা ব্যক্ত করেন। বীজ, সার, কীটনাশক এবং মজুরি মিলিয়ে প্রতি কানিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ন্যায্য দাম পেলে প্রতি খানির ধান বিক্রি করে তিনি ২০ হাজার টাকা পাবেন বলে জানান।

গুমাই বিলে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার উত্তম কুমার বলেন, গত রোববার আমন ধান বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী প্লটের নমুনা শস্য কর্তন করা হয়েছে। ব্রিধান ৫১ জাতের নমুনা শস্য কর্তনে দেখা যায়, ২০ বর্গমিটারে ১৬.২৮০ কেজি (কাঁচা) ফলন হয়েছে। যেখানে উপস্থিত আর্দ্রতা ১৬.৭%। ১২% আর্দ্রতায় ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৭০ মেট্রিক টন এবং ১৪% আর্দ্রতায় ফলন ৭.৮৮ মেট্রিক টন। চালে ৫.২২ মেট্রিক টন। যেখানে গবেষণাগারে বলা হয়েছে, ফলন ৪.৫-৫ মেট্রিক টন হবে, সেখানে আমরা ফলন পেয়েছি ৭.৮৮ মেট্রিক টন। অন্যদিকে এ্যারাইজ এজেড-৭০০৬ হাইব্রিড জাতের ধান কাটার পর হেক্টর প্রতি ৮.৭ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, ঐতিহ্যবাহী গুমাই বিল সহ উপজেলার অন্যান্য কৃষি জমিতে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। ঘরে ঘরে এখন নতুন ধানের ঘ্রাণ। আমরা সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শন করছি, এর মধ্যে যা কাটা হয়েছে তাতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করি, এবারও ধানের উৎপাদন বরাবরের মতো রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। কৃষকের মনে যে ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশংকা এই বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা আছে। আশা করি তারা ন্যায্য দাম পাবেন।

অনুকূল আবহাওয়ায় আমনের বাম্পার ফলন, সিন্ডিকেটের শঙ্কা সব মিলিয়ে ধান কাটার মাধ্যমে শুরু হয়েছে নবান্না উৎসবের। গুমাইয়ের বুকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষক। সে নয়নাভিরাম দৃশ্য প্রকৃতিকে করে তুলেছে আরো মনোমুগ্ধকর৷