চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া রাবার ড্যামের পানি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের জমাটবদ্ধ এই পানি ছেড়ে দেয়ার পর নদীতে মাছ ধরতে ভিড় করেছেন এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার মৎসপ্রেমী মানুষ। ইছামতী নদীর উপর নির্মিত রাবার ড্যামটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়। এর সুফল পাচ্ছেন উপজেলার ৫ ইউনিয়নের স্থানীয় হাজার হাজার কৃষক। রাবার ড্রাম ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রতিবছর জমাটবদ্ধ পানিতে মাছ চাষ করেন। এবং প্রতিবছরই নির্ধারিত সময়ে পানি ছেড়ে দিয়ে মাছ ধরার জন্য সবাইকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উন্মুক্ত এই নদীতে সর্বসাধারণের একযোগে মাছ ধরার দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। মাছ ধরাকে ঘিরে নদী পাড়ের মানুষের মাঝে চলছে মাছ ধরার আমেজ।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ হাত জাল, মশারি, ঝাঁকি জালসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে সকলেই ব্যস্ত মাছ ধরতে। আবার অনেকেই ছুটে এসেছেন মাছ ধরার এই দৃশ্য দেখতে। এদিন রাত ১২টায় পানি ছেড়ে দেওয়া হয় রাবার ড্রামের। এরপর থেকেই চলছে এই উৎসব। এবার নদীতে বড় বড় রুই, কাতলা, বোয়াল, তেলাপিয়া, শোল মাছ পেতে দেখা যায়।
স্থানীয় কৃষক শামসুল আলম মাছ ধরতে এসেছেন। তিনি জানান, “ভোররাত থেকেই মাছ ধরা শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬/৭ কেজি মাছ পেয়েছি। আরো দুইদিন চলবে মাছ ধরার এই উৎসব।”
মহিউদ্দিন নামে একজন জানান, তিনি এবার সাত কেজি ওজনের কাতলা মাছ পেয়েছেন। এছাড়া তেলাপিয়া, পুটি, শোল পেয়েছেন। এই মাছ পেয়ে তিনি অনেক খুশি।
পারুয়া ইছামতি রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মো. জহুরুল ইসলাম জানান, “তথ্যমন্ত্রীর হাত ধরে রাবার ড্যাম স্থাপিত হওয়ার পর এর সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষক। পাশাপাশি রাবার ড্যামে পানি ধরার পর জানুয়ারির শুরুতে নিজ উদ্যোগে এবং উপজেলা মৎস অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সেখানে মাছের পোনা ছেড়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি সেই পোনাগুলো খাবার দিয়ে যত্ন করে বড় করা হয় এবং পানি ছেড়ে দিলে মাছগুলো সর্বসাধারণের জন্য ঘোষণা দিয়ে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এবার বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছের পাশাপাশি ১০/১২ কেজি ওজনের বড় মাছও পেয়েছেন বলে জানান স্থানীয় অনেকেই। এবার চার মাস পর পানি জমাটবদ্ধ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
তিনি আরো বলেন, এবার জমাটবদ্ধ পানিতে হ্যাচারীর মাধ্যমে কয়েকজন চাষী মিলে মাছ চাষ করেছেন। তারা ৩৫ কেজি তেলাপিয়ার পোনা অবমুক্ত করে প্রায় ২৩৫ কেজি মাছ পেয়েছেন বলে জানান। এবছর থেকে তিনি জমাটবদ্ধ পানিতে হ্যাচারী চাষে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করবেন বলে জানান। তার দাবী কৃষকের পাশাপাশি রাবার ড্রামের সুফল মৎসচাষীরাও পাবেন।
উল্লেখ্য, প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে পারুয়া সৈয়দ নগর এলাকায় এই রাবার ড্রামটি নির্মিত হয়। এটি হওয়ার পর থেকে উত্তর রাঙ্গুনিয়ার ৫টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২ হাজার একর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের অধিকাংশ সময় পতিত থাকা এসব জমিতে বছরের ১২ মাসই চাষাবাদ কিংবা মৌসুমী সবজি উৎপাদনের সুযোগ পাওয়ায় কৃষকদের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের বন্যা