প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় মামলা দায়েরের এগারদিনের মাথায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৮ ডাকাত ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র্যাবের (সিপিপি-২) হাটহাজারী ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে তাদের থেকে ৪৪ ভরি স্বর্ণালংকার, কয়েন ও সোনা বিক্রির ৩০ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার(২২ নভেম্বর) দুপুর ১২ টার লেঃ কর্ণেল এম এ ইউসুফ, পিএসসি। অধিনায়ক, র্যাব-৭, পতেঙ্গা আটকের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এর আগে সোমবার ২১ নভেম্বর রাউজান ও হাটহাজারীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলো- ১। মুসা, ২। সাইদুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুল ৩। খোরশেদুল আলম (২৮), ৪। সাজ্জাদ হোসেন (২৭), ৫। মোঃ বাপ্পি (২৬), ৬। সজল শীল (২৭), ৭। মোঃ ইদ্রিস প্রকাশ কাজল (৩৪)’দে, ৮। বিপ্লব চন্দ্র সাহা(৩৮)।
জানা গেছে, রাউজান উপজেলার সুলতান পাড়ার হাজী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বাড়ীর মো.আলী চৌধুরীর পুত্র প্রবাসী মো.সরোয়ার আলম গত ২৭ অক্টোবর ২০২২খ্রিঃ তারিখ দুবাই হতে বাংলাদেশে আসার পর গত ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে তার বৃদ্ধ বাবাকে বাসায় রেখে মামাতো বোনের বিয়েতে যান। ওইদিন গভীর রাতে একদল ডাকাত প্রবাসী সরোয়ার চৌধুরীর পাকা ঘরের পিছনে লোহার জানালার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে তার বৃদ্ধ বাবা কে কম্বল দিয়ে চেপে ধরে চোখ মুখ ও হাত পা বেধে গলায় চাকু ধরে হত্যার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে আলমারির চাবি নিয়ে নেয়। ডাকাত দলের মধ্যে মোঃ মুসা ভিকটিমের বাবার গলায় চাকু ধরে রাখে এবং চিৎকার করলে জবাই করে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে। এসময় ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা আলমারীতে রক্ষিত অবস্থায় থাকা ভিকটিমের স্ত্রী, মা, বোনের স্বর্ণালংকার এবং অপরাপর আত্বীয় স্বজনের আমানত স্বরুপ রাখা স্বর্ণালংকারসহ সর্বমমোট ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে। এছাড়াও ডাকাত দল ভিকটিমের মামাতো বোনের বিবাহের জন্য ঘরে রাখা নগদ ০৫ লক্ষ টাকা, উন্নতমানের ০৫ মোবাইল এবং ০১টি ট্যাব লুট করে।
উল্লেখ্য, উক্ত ডাকাত দল পরিকল্পনা করে গত ২৯ অক্টোবর ২০২২খ্রিঃ তারিখ রাত আনুমানিক ০১.০০ ঘটিকা হতে ভোর ০৪.০০ ঘটিকা পর্যন্ত ভিকটিমের বৃদ্ধ বাবাকে বাধা অবস্থায় রেখে উপরে উল্লেখিত মালামালসহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে গত ০৯ নভেম্বর ২০২২খ্রিঃ তারিখ ভুক্তভোগী ভিকটিম মোহাম্মদ সরোয়ার চৌধুরী বাদী হয়ে উক্ত দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানায় একটি ডাকাতি মামলা দয়ের করে যার মামলা নং-৭৭/০৯ নভেম্বর ২০২২খ্রিঃ, ধারা ৪৫৭/৩৮০ পেনাল কোড ১৮৬০।
উক্ত দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনাটি লোমহর্ষক , চাঞ্চল্যকর ও রহস্যজনক হওয়ায় ডাকাতির মূল আসামী গ্রেফতার ও মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ভিকটিম প্রবাসী মোহাম্মদ সরোয়ার চৌধুরী অধিনায়ক, র্যাব-০৭, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। পরে র্যাব-৭ উক্ত ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশেষ সংবাদের ভিত্তিতে গত ২১ নভেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ বিকেলে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন দক্ষিণ গহিরা সিবের ঘাট এলাকার একটি বাসা বাড়ি হতে আসামী ১। মুসা কে গ্রেফতার করা হয় এবং তার হেফাজত হতে ডাকাতি হওয়া নগদ ০৫ লক্ষ টাকা এবং ডাকাতি হওয়া স্বর্ণালংকার বিক্রয়ের ১,৯৯,০০০/- টাকাসহ সর্বমোট-৬,৯৯,০০০/-টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডাকাত দলের সদস্য ধৃত আসামী মুসার দেয়া তথ্য মতে ডাকাত দলের সদস্য ২। সাইদুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুল কে একই দিনে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন গহিরার উত্তর-পূর্ব কোতোয়ালী ঘোনা দলই নগরস্থ একটি বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্যমতে রাউজান ও হাটহাজারী থানা এলাকার বিভিন্ন স্থান হতে ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্য ৩। খোরশেদুল আলম (২৮), ৪। সাজ্জাদ হোসেন (২৭), ৫। মোঃ বাপ্পি (২৬), ৬। সজল শীল (২৭), ৭। মোঃ ইদ্রিস প্রকাশ কাজল (৩৪)’দের গ্রেফতার করা হয় এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহার্য গ্রিল কাটার, ছোরা, টর্চ লাইটসহ ডাকাতি হওয়া বিভিন্ন ধরণের সর্বমোট ৪৬ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ডাকাতি হওয়া স্বর্ণের বিক্রয়লব্দ মোট ২৩,০২,৬০০/- টাকা উদ্ধার ও ডাকাতি মালামাল গ্রহণকারী ৮। বিপ্লব চন্দ্র সাহা(৩৮) এর জুয়েলার্সের দোকান হতে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে উপস্থিস স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা উল্লেখিত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে।
পরে গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়।